ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় আসর ফিফা বিশ্বকাপ। নানা চড়াই উৎড়াইয়ের পর এখন শুরুর অপেক্ষা। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে আয়োজকদের। তবে শুরু থেকেই কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় বিদেশি শ্রমিকদের সাথে বৈরি আচরণের অভিযোগ জানিয়ে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
তারা বলছে, শত মানুষের কান্না, কষ্ট, ঘাম, শ্রম আর রক্তে নির্মিত হয়েছে কাতারের বিভিন্ন স্থাপনা। সেইসব শোষণের শিকার ও প্রাণ হারানো শ্রমিকদের জন্য বিশাল ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ফিফার কাছে খোলা চিঠি দিয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়েছে ৪৪০ মিলিয়ন ডলারের।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই দাবি করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশি শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা) বরাদ্দ করার জন্য ফিফার কাছে আহ্বান জানানো হয়।
ফিফা সভাপতির কাছে পাঠানো চিঠিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ফিফার উচিৎ ভবিষ্যতে আয়োজক দেশের সঙ্গে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ফিফারও অংশগ্রহণ করা। যাতে করে বিদেশি শ্রমিদের মানবাধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০১০ সালে ফিফা যখন কাতারকে ২০২২ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কাতারকে নির্বাচন করলো, তখন থেকেই নির্মাণ কাজ শুরু করে কাতার এবং তখন থেকেই তারা বিদেশি শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘণ করে আসছিল। অথচ, ফিফা কাতারে শ্রমিকদের রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সে সবের কোনো খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি।
ফিফা নামক যে সংস্থাটি রয়েছে, তাদের অবশ্যই উচিৎ বিশ্বকাপের প্রাইজমানি থেকে ৪৪০ মিলিয়ন ডলার এসব ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া।’
ফিফাকে লেখা চিঠিতে গত এক যুগে কয়েক হাজার শ্রমিকের মৃত্যুর তদন্ত করতে কাতার কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি।
গত বছর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি গার্ডিয়ান অনুসন্ধানী রিপোর্টে দাবি করে বিশ্বকাপের বিভিন্ন প্রকল্পে গত এক দশকে প্রাণ হারান দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক হাজার শ্রমিক। যার মধ্যে শুধু বাংলাদেশির সংখ্যাই এক হাজারের বেশি।
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও দেশটির জাতীয় দলের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকেও এই আবেদনে সমর্থন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবির জবাব দিয়েছে ফিফাও।
ফিফা কর্তৃপক্ষ বলেছে, যে সব অভিযোগ উঠেছে, তারা এসবের তদন্ত করবে। পর্যালোচনা করবে এবং যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার একটা পথ বের করে নেবে তারা। ফিফা বলেছে, ‘যতগুলো অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সবই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বের সঙ্গে সম্পর্কিত।’
তারা আরও জানিয়েছে, এসব নিয়ে কাজ করছে আয়োজকদের একটি সাংগঠনিক কমিটি এবং এরই মধ্যে অনেককেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি জবাবও দিয়েছে কাতার সরকার। দেশটি বলছে, তাদের লেবার সিস্টেমে বেশ ভালোই অগ্রগতি হয়েছে। তবে তারা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এর আগে করা অভিযোগকে অস্বীকার করেছে।
শত সমালোচনার মধ্যেই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নতুন করে শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাতার। ২১ নভেম্বর থেকে বিশ্বকাপ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ এ দেশটি।