ইমাম মেহেদী:
ছড়া, কবিতা, নৃত্য, গান, গল্পবলা, ছবি আঁকা ও স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় জাকজমকভাবে উদযাপিত হয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪৫ বছর পূর্তি উৎসব। ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ শুক্রবার বিকেলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের এম এ ওয়াজেদ মিঞা বিজ্ঞান ভবনের ১০০১নং কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম এর কু্ষ্টিয়া ইউনিট।
অনুষ্ঠানের প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ইউনিট এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন। এসময় তিনি উপস্থিত অতিথি, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচয় করে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খোদাবক্স হোসেনকে। এসময় উপস্থিত সবাইকে হাত উঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। উপস্থিতি সবাই দাড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানান।
এসময় রিসার্স সেন্টার কুষ্টিয়ার পক্ষ থেকে বিশ্বাসাহিত্য কেন্দ্রের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। স্যার ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব মো. আব্দুল মতিন। পরে উপস্থিত অতিথিগণ ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অজয় মৈত্র বলেন, ছেলেমেয়েদের বইপড়ার যে আদর্শ আমাদের সবার প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার চালু করেছেন তা বিশ্বের মাঝে রোল মডেল। তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকান্ডকে আমাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লব হিসেবে তুলে ধরেন।
কুষ্টিয়া সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও শহিদ পরিবারের সন্তান মো. ওবাইদুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের মননশীল চিন্তার বিকাশ ঘটানর জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া ও সাংস্কৃতিক যাত্রা হয়েছিলো। আজ তা বিশ্বের মাঝে সফলভাবে ছড়িয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নবীনূর রহমান খান বলেন, আজকের উপস্থিতিই প্রমাণ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কতটা মানুষের হৃদেয়ে স্থান করে নিয়েছে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
কুষ্টিয়া সেন্ট্রাল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কে এম আবুৃল বাশার বলেন,
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আজ সবার মাঝে আলোকিত আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে বিকশিত করার অন্যতম মাধ্যম হলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি।
কুষ্টিযা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইনিস্ট্রাক্টর ড. মো. রেজাউল করিম মিন্টু বলেন, আমি প্রথম থেকেই কুষ্টিয়া ইউনিটের কার্যক্রমের সঙ্গে আছি। নিজেও বইয়ের জগতে থাকার চেষ্টা করি, আশাকরি তোমরাও বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে তুলবে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গল্প উপস্থাপন করেন।
কবি, সংগঠক ও উপস্থাপক কনক চৌধুরী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছোটছোট ছেলেমেয়েরা বই পড়ে, ছবি আঁকে, নৃত্য করে, আবৃত্তি করে এটা যে অভিভাবক হিসেবে কতো ভালো লাগার বিষয় তা বলে বোঝানো যাবে না। আপনারা যারা অভিভাবক আছেন সন্তানদের মাদক ও নেতিবাচক কাজ থেকে বিরত রাখতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাথে থাকার আহবান জানান।
কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক ও রিসার্স সেন্টার কু্ষ্টিয়ার পরিচালক মো. কবিরুল ইসলাম জানান, আমি স্বপরিবারে এই অনুষ্ঠানে এসেছি। ব্যস্ত জীবনে প্রশান্তির একটা জায়গা হলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচি। বিভিন্ন সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রের এই বইভরা গাড়ি দেখতে পাই, সেখানে ছেলেমেয়েরা বই সংগ্রহ করে, বই পড়ে, এর চেয়ে ভালো লাগার কি হতে পারে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্বে বক্তব্য রাখেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমান রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা লেখক- গবেষক ইমাম মেহেদী। এসময় তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কয়েকটি গ্রন্থের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। কলেজে সুন্দর আয়োজন সম্পন্ন করার সুযোগ প্রদান করায় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিশির কুমার রায়, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস খান এবং প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আকলিমা খাতুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কথার পর, কবিতার উক্তি ও গানের কথা দিয়ে
পুরো অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করেন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম কুষ্টিয়া ইউনিটের পাঠক ও সেচ্ছাসেবক যাবিহা মুসতাবসারা জান্নাত।
পরে অনুষ্ঠারে গান, আবৃত্তি, গল্পবলা, ছবি আঁকা, নৃত্যে অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে বই তুলে দেন অতিথিরা।