নিজস্ব প্রতিবেদক: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব ৩ গ্রামের মানুষ তীব্র নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রামের তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র পাড়ের শত শত পরিবার। গত ৩-৪ দিনে তিস্তা নদীর ভাঙনের তোড়ে জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভাঙনকবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙনকবলিতদের পাশে দাঁড়াননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা ও গোয়ালপুড়ি গ্রামে গত এক মাসে ২০টির মতো বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে। তাছাড়াও ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলোর চর ও রসুলপুর গ্রামের গত এক মাসে ৩০টি পরিবার ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে।
গত এক মাস যাবৎ ভাঙন শুরু হয়েছিল উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে গত তিন দিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতার ফলে প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর, শত শত বিঘা ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠসহ মানুষের শেষ সম্বলটুকুও নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে এক রাতের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০/৪০টি বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অনেকেই। ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে সুন্দরভাবে মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছি। গত পরশু থেকে হঠাৎ করে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মাদরাসার অর্ধেক চলে গেছে। বাকিটা ভেঙে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
কালপানি বজরার এলাকার মোজাম্মেল হক (৬৫) বলেন, ‘তিন দিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পড়ি আছি। গরিব মানুষ জায়গা নেই, কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দূরসম্পর্কের জেঠাতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর আল্লাহ দেখপে।’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু দেখে গেছেন। তাদের নাকি কিছুই করার নেই।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, গত এক মাসে আমার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। তাদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে।
ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নে গত এক মাসে ৩০টির মতো পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাঙনকবলিত পরিবারের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু হবে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। আর খোলা আকাশের নিচে কেউ থাকলে সেটা আমার নজরে আসেনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২০-২৫ বছর পূর্বে মূল নদীর স্রোত ছিল এই এলাকায়। গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেওয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।