জাহাঙ্গীর আলম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ২২.০৫.২৩
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক দুই কিশোরকে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার (২২ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলের কালিরহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফুলবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত কুমার মোহন্তকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার বিকালে ভুক্তভোগী এক কিশোরের দাদা শামসুল হক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত কুমার মোহন্ত(৩০)উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ- সভাপতি এবং মধ্য পানিমাছ কুটি গ্রামের মৃত দেবেন্দ্রনাথ মোহন্তের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় মাদক ব্যবসা, চুরি ও মারামারির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা যায়, রোববার দুপুরে উপজেলার মধ্য পানিমাছকুটি গ্রামের নিজ বাড়ীতে জয়ন্ত দুই কিশোরকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বলাৎকার করে। নির্যাতনের শিকার ওই দুই কিশোর বর্তমানে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের একজন উপজেলার কুঠিবাড়ী মর্ডান উচ্চ বিদ্যালয় ও অপর জন ফুলবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মামলার বাদী শামছুল হক জানান, রোববার সকাল এগারোটার দিকে জয়ন্ত আমার নাতিকে ফোন করে তার চায়ের দোকানে ডাকে। ফোন পেয়ে আমার নাতি চার বন্ধু মিলে উপজেলা সদরস্থ জয়ন্তের চায়ের দোকানে যায়। সেখানে চা- নাস্তা খাওয়ানোর পর জয়ন্ত তাদেরকে কৌশলে অটোরিকশায় উঠিয়ে নিজ বাড়ীর এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তিনজনকে বাড়ীর পাশের মুদির দোকানে বসিয়ে রেখে গোপন পরামর্শের কথা বলে আমার নাতিকে নিয়ে বাড়ীতে ঢোকে। বাড়ীর ভিতরে গিয়ে জয়ন্ত আমার নাতির গলায় ছুরি ঠেকিয়ে এবং লাঠি দিয়ে মেরে জোরপূর্বক বলাৎকার করে।
তিনি আরও জানান, এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাশের রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এদিকে অনেকক্ষন সময় অতিবাহিত হলে দোকানে অপেক্ষমান আমার নাতির তিন বন্ধু জয়ন্তের বাড়ীর দরজায় গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করে। তখন জয়ন্ত দরজা খুলে তিনজনের একজনকে সার্টের কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়ীর ভিতর নিয়ে গিয়ে একই ভাবে বলাৎকার করে। অপর দুইজন ভয়ে পালিয়ে যায়। মারধোর ও বলাৎকারে আমার নাতি ও তার বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়লে দুপুর দুইটার দিকে জয়ন্ত তাদেরকে ঘটনা কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে একটি অপরিচিত অটোরিকশায় উঠিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়।
বাড়ীতে ফিরে নাতি ভয়ে লজ্জায় কাউকে কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে থাকে। পরে রাতে বেলা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসা দুই জনের কাছে ঘটনা শুনে অসুস্থ নাতি ও তার বন্ধুকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
তিনি আরও জনান, জয়ন্ত এর আগেও এক কিশোরের সাথে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তখন এলাকাবাসী মেরে তার পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। আমার নাতির সাথে সে যে অন্যায় করেছে আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা জয়ন্ত কুমার মোহন্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমুলক ফাঁসানো হচ্ছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌকির হাসান তমাল জানান, কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় সংগঠন নিবে না। এ ঘটনায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।