মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখায় ভাঙ্গা ও নগরকান্দার শত শত গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী নগরকান্দা উপজেলার ঝাটুরদিয়া বাজার মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক শাখায় এ ঘটনা ঘটে।
শনিবার বেলা ১০টার সময় মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংকের সামনে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেছে। এ ঘটনায় ভাঙ্গা ও নগরকান্দায় কয়েকজন গ্রাহক মালিগ্রাম মিডল্যান্ড শাখায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
মিডল্যান্ড ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী পলাতকরা হলেন, ব্যাংকের ম্যানেজার অলোক মন্ডল, তার বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের চান্দ্রা গ্রামের মৃত অনিল মন্ডলের ছেলে।
ব্যাংকের ফিল্ড অফিসার মো. জাহাঙ্গীর শেখ, তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার চন্দনা গ্রামের সিরাজ শেখের ছেলে ও ব্যাংকের ক্যাশিয়ার মো. মিঠুন মাতুব্বর, তার বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার আালগী ইউনিয়নের বাচ্চু মাতুব্বরের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখার সামনে মিডল্যান্ড মালিগ্রাম কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়ে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করেছেন। বেশ কিছু গ্রাহক ব্যাংকের সামনে এসে বিক্ষোভ করেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গত ২৬ ডিসেম্বর তালা লাগানো দেখতে পায়। পরে একজন গ্রাহক ফোন করলে তারা অসুস্থতার কথা বলে এক সপ্তাহ পরে ব্যাংক খুলবে বলে জানায়। এক সপ্তাহ পরেও ব্যাংকে তালা মারা দেখতে পেয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খোঁজখবর নিতে থাকে। এরপর বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের ঝাটুরদিয়া শাখার ম্যানেজার অলোক মন্ডলসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সকল গ্রাহকরা জানতে পারে তাদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গ্রাহকের মূলধন হারিয়ে তারা এখন পাগল প্রায়।
এই ঘটনায় ৮/১০ জন গ্রাহক মালিগ্রাম মিডল্যান্ড শাখায় ও নগরকান্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দশ খারদিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, আমি মিডল্যান্ড ব্যাংকে ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। এখন শুনতে পাই ব্যাংকের লোকজন টাকা মাইরা পালাইয়া গেছে। আমরা সবাই গ্রাহক মিলে ফরিদপুর কোর্টে মামলা করবো। সরকারের কাছে সকল গ্রাহকদের দাবি আমাদের টাকা ফেরত পাই, তার ব্যবস্থা যেন করে দেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আলিয়া বেগমের স্বামী আজিজুল হক জানান, আমার স্ত্রীর মিডল্যান্ড ব্যাংকে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা রেখেছে। এখন ব্যাংকের সব লোকজন পলাতক রয়েছে। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। টাকা খোয়া গেলে আমরা পথে বসে যাব।
ভাঙ্গা উপজেলার চান্দা গ্রামের সুশীল গয়লা জানান, আমি তিন বছরের জন্য ৪৫ লাখ টাকা এফডিআর করে রেখেছি। ব্যাংকের ম্যানেজার আমার আত্মীয় একই গ্রামের বাড়ি। তাছাড়া ব্যাংকে টাকা রাখবো ভয় কিসের। এখন জানতে পারছি অলোক মন্ডল ব্যাংকের সব টাকা আত্মসাৎ করে পরিবার নিয়ে ভারতে চলে গেছে। আমি এখন পাগল হয়ে গেছি।
ভাঙ্গা উপজেলার ঝাটুকদা গ্রামের মনিরা বেগম জানান, আমার দশ বছরের কষ্টের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন শুনি ব্যাংকের লোকজন টাকা মাইরা পালাইয়া গেছে। আমি পথের ফকির হয়ে গেছি।
এছাড়া অনেক গ্রাহকের মিডল্যান্ড ব্যাংকে লাখ লাখ জমা রেখেছে বলে অভিযোগ করছেন।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সংবাদ পেয়েছি। এ ঘটনায় ২/৩ জন ভুক্তভোগীদের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম মিডল্যান্ড ব্যাংক শাখার ম্যানেজার মো. আসিফ ইকবাল বলেন, বেশ কয়েকজন গ্রাহক আমার কাছে এসেছিল। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছি, তাদের কাগজপত্র দেখেছি। তাদের অ্যাকাউন্টে কোন টাকা-পয়সা জমা নেই। এবিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত পাইনি।