আব্দুর রহিম: ভাড়া বাসায় অবৈধ ভাবে হেফজোখানা খুলে কোমলমতী এক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্য্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদ-এর বিরুদ্ধে। বিষয়টি থানাকে অবহিত করায় বৃহষ্পতিবার দুপুরে সস্ত্রীক আত্মগোপন করেছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষক আবু সাদ শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের জাহাজঘাটা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে।
বরেয়া গ্রামের ভিকটিমের পিতা মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কাজী আলীউদ্দিন ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আট মাস আগে ছোট ছেলে নাঈম হোসেন (১১) কে বরেয়া গ্রামের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনের ভাড়াটিয়া ও বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদ-এর হেফজখানায় এক হাজার টাকা মাসিক বেতনে পড়াশুনা করার জন্য ভর্তি করান। বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু মুছার ছেলে ইলিয়াস হোসেন ও সহকারি শিক্ষক হাসানুজ্জামানের ছেলে নাঈম ওই হেফজখানায় পড়াশুনা করতো।
তিন মাস যাবৎ ওই শিক্ষক জাফরপুর গ্রামের চৌকিদার আব্দুল গফুর সরদার এর বাড়ির দোতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে সেখানে হেফজোখানা পরিচালনা করে আসছিল মাসিক তিন হাজার টাকায়। ভিকটিমের পিতা আমিরুল ইসলাম এ প্রতিনিধি কে বলেন, হেফজোখানায় ভর্তি করার কিছুদিন যেতে না যেতেই তার ছেলেকে গভীর রাতে কৌশলে শৌচাগারে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করতো শিক্ষক আবু সাদ। বিষয়টি কাউকে জানলেও খুন করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। যৌন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বুধবার বলাৎকারের বিষয়টি তাকে ও পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে ছেলেটি। বিষয়টি ভিকটিমের পরিবার বৃহষ্পতিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল কবির ও তারালী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোটকে অবহিত করেন। ইউপি চেয়ারম্যান তার ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন এবং থানায় নিয়ে যান।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা বিস্তারিত জানার পর উপপরিদর্শক আবু সাঈদকে জাফরপুর গ্রামে পাঠান। উপপরিদর্শক আবু সাঈদ বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জাফরপুর গ্রামের ফিরোজের দোকানে বসে ওই শিক্ষক আবু সাদকে ডেকে আনার জন্য এক যুবককে পাঠিয়ে দেন। বিষয় টি বেগতিক বুঝে ওই ধর্মীয় শিক্ষক কৌশলে পালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর আবু সাদ-এর দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ তার তিন মাসের সন্তানকে নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান। পুলিশ ইচ্ছা করলে ওই অসভ্য শিক্ষককে ধরতে পারতো বলে এলাকাবাসী জানান।
ওই শিক্ষক বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন বছর চাকুরি করার সুবাদে নারী ঘটিত কেলেঙ্কারীরতে জড়িয়ে পড়েন।বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, পড়াশুনা করাকাালীন বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা স্কুলে এলে ওই শিক্ষক তাদের ডেকে আপত্তিকর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে থাকেন। বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু মুসা জানান, সহকর্মী আবু সাদ এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের ঘটনার সত্যতা অন্যদের কাছ থেকে জানতে পেরে নিজের ছেলেকে কয়েকদিন আগে হেফজখানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রথম স্ত্রীকে একমাত্র পুত্র সন্তানসহ তালাক দিয়েছেন ওই শিক্ষক আবু সাদ।
তিনি বলাৎকারের ঘটনা সত্য হলে ওই শিক্ষকের দৃষান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার বৈদ্য জানান, বিষয়টি তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। তবে কেউ যদি ঐ শিক্ষক আবু সাদ এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আনেন সেক্ষেত্রে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই ঘটনার সত্যত্যা যাঁচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারালী ইউপি চেয়ারম্যান ও কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট জানান, বৃহষ্পতিবার সকালে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভিকটিম ও তার বাবাকে থানায় পাঠিয়ে দেন। তবে ভুলবশতঃ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা রেকজর্ড করা যায়নি।
শুক্রবার(আজ) ভিকটিমকে নিয়ে তার বাবা আবারো থানায় এজাহার দিতে গেছে। এ ব্যাপারে বরেয়া মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আবু সাদ-এর সঙ্গে শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা হলে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ষড়যন্ত্র বলে এড়িয়ে যান। কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যেগোযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে উপপরিদর্শক খবিরউদ্দিন জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওই শিক্ষক আবু সাদ এর বিরুদ্ধে।