ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই: ডিএমপি কমিশনার ডাকসু নির্বাচনে ২ হাজারের বেশি পুলিশ, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত : ডিএমপি কমিশনার নাটোরের বনপাড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রত্যেকটি নেতাকর্মী অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবে’ আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্রলোভন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, গ্রেফতার ২ ফ্যাস্টিট শাসনে ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করবে বিএনপি- মির্জা ফখরুল সারাদেশে ৩৩ হাজার মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, বসানো যাবে না মদ-গাঁজার আসর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দীঘিনালার দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান অফিস করেন না খাদ্য পরিদর্শক বেতন ভাতা নেন নিয়মিত ডাকসু নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না: সেনাবাহিনী

ক্লু-লেস হাবিব উল্লাহ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামী গ্রেফতার

সাংবাদিক

মনির হোসেন।।

১৩ জুলাই রবিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম জানান গত ১১ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১ টার সময় মতলব উত্তর ৩নং সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুরের মধ্যে একজন পুরুষ মানুষের মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় মোঃ হাবিব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত হাবিব উল্লাহ (৫০) পরিচয় সনাক্ত করা না গেলেও পরে স্থানীয় লোকজন এসে জানায় যে, মৃত ব্যক্তিটির নাম মোঃ হাবিব উল্লাহ তিনি পুটিয়ারপাড় এলাকার মনোয়ারা বেগম মনু এর স্বামী। পরবর্তীতে তাহাদের পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দিলে তাহারা ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহ সনাক্ত করে এবং মৃতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার এজাহার দিলে মতলব উত্তর থানায় এই মামলা রুজু হয়। যার এফআইআর নং-১৮, তারিখ- ১১ জুলাই ২০২৫; জি আর নং-৪২০, তারিখ- ১১ জুলাই ২০২৫; ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

মামলা রুজু হওয়ার পর সহকারী পুলিশ সুপার জনাব খায়রুল কবির এর তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মোঃ রবিউল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডলের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মোঃ দেলোয়ার হোসেন, এসআই (নিঃ) একেএম ইউনুছ, এএসআই (নিঃ) মোঃ মনির হোসাইন, এএসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল হোসেন ও কনস্টেবল/৬৬৩ খালেদ মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিনসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় একটানা ২১ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে হাবিব উল্লাহ হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত মোঃ কামাল মীরা (৫৫), পিতা-মৃত খালেক মীরা, মাতা-মৃত নুর জাহান, সাং-রাজারচর, চরমোনাই, থানা ও জেলা- বরিশালকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, মৃত হাবিব উল্লাহ সাথে তার ৩/৪ মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মদনপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় চায়ের দোকানে আড্ডাস্থলে উভয়ের পারস্পরিক পরিচয় হয়। মৃত হাবিব উল্লাহ যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত এবং ধৃত আসামী কামাল মীরা ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি প্রেস এর কারখানায় নৈশ প্রহরীর কাজ করত।

আসামী কামাল মীরা’র ১ম স্ত্রী তার সংসার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সে ২য় বিবাহ করার জন্য মনস্থির করে। তখন মৃত হাবিব উল্লাহ’র সাথে পরিচয় হলে তাকে ২য় বিবাহ করানোর মতো মেয়ে তার কাছে আছে বলিয়া প্রস্তাব করে। সেই সুবাদে আনুমানিক ১ মাসে আগে মৃত হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে নগদ ৬,০০০/- টাকা নেয় এবং গত ১০/০৭/২০২৫খ্রিঃ তারিখ মৃত হাবিব উল্লাহ মতলব উত্তর থানাধীন তার শ্বশুর বাড়ী এলাকায় আসামী কামাল মীরাকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে পুনরায় নগদ ৪,০০০/- টাকা নেয় এবং তারা উভয়ই বিকেলের দিকে মুরাদপুর এলাকা থেকে মতলব উত্তর থানা এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সন্ধ্যার সময় প্রথমে শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে আসে।

মাজারে অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করার পর আসামী কামাল মীরা মৃত হাবিব উল্লাহকে কখন মেয়ে দেখতে যাবে এই কথা বলে তাগিদ দিলে মৃত হাবিব উল্লাহ আসামীকে নিয়ে রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। সেখানে বসে তাহারা উভয়ে গল্প করার সময় মৃত হাবিব উল্লাহ তাদের সাথে থাকা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। উভয়ের মধ্যে পুকুরের পাকা সিঁড়ির উপর ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

এই ধস্তাধস্তির ফলে তারা উভয়েই পাকা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে মুখমন্ডলসহ শরীরে জখম প্রাপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা উভয়েই পানিতে পড়ে যায়। আসামি কামাল মীরা হাবিবুল্লাহকে অতর্কিত তলপেটে ও অন্ডকোষ বরাবর লাথি মারলে হাবিবুল্লা যখন একটু দুর্বল হয়ে যায় তখন আসামি কামাল মীরা হাবিবুল্লাহ কে পানিতে চুবিয়ে ধরে। এই সময় মৃত হাবিবুল্লাহ আসামির ডান হাতের দুইটি আঙ্গুলে কামড় দিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামি সাঁতরে পুকুরের অপর প্রান্ত দিয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিগঞ্জ থানাধীন কদমতলী নামক এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মতলব উত্তর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৪:২৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
৫৫৭ Time View

ক্লু-লেস হাবিব উল্লাহ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামী গ্রেফতার

আপডেটের সময় : ০৪:২৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

মনির হোসেন।।

১৩ জুলাই রবিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম জানান গত ১১ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১ টার সময় মতলব উত্তর ৩নং সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুরের মধ্যে একজন পুরুষ মানুষের মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় মোঃ হাবিব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত হাবিব উল্লাহ (৫০) পরিচয় সনাক্ত করা না গেলেও পরে স্থানীয় লোকজন এসে জানায় যে, মৃত ব্যক্তিটির নাম মোঃ হাবিব উল্লাহ তিনি পুটিয়ারপাড় এলাকার মনোয়ারা বেগম মনু এর স্বামী। পরবর্তীতে তাহাদের পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দিলে তাহারা ঘটনাস্থলে এসে মৃতদেহ সনাক্ত করে এবং মৃতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার এজাহার দিলে মতলব উত্তর থানায় এই মামলা রুজু হয়। যার এফআইআর নং-১৮, তারিখ- ১১ জুলাই ২০২৫; জি আর নং-৪২০, তারিখ- ১১ জুলাই ২০২৫; ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।

মামলা রুজু হওয়ার পর সহকারী পুলিশ সুপার জনাব খায়রুল কবির এর তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মোঃ রবিউল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডলের নেতৃত্বে এসআই (নিঃ) মোঃ দেলোয়ার হোসেন, এসআই (নিঃ) একেএম ইউনুছ, এএসআই (নিঃ) মোঃ মনির হোসাইন, এএসআই (নিঃ) মোঃ রবিউল হোসেন ও কনস্টেবল/৬৬৩ খালেদ মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিনসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় একটানা ২১ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে হাবিব উল্লাহ হত্যাকান্ডের সহিত জড়িত মোঃ কামাল মীরা (৫৫), পিতা-মৃত খালেক মীরা, মাতা-মৃত নুর জাহান, সাং-রাজারচর, চরমোনাই, থানা ও জেলা- বরিশালকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, মৃত হাবিব উল্লাহ সাথে তার ৩/৪ মাস পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মদনপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় চায়ের দোকানে আড্ডাস্থলে উভয়ের পারস্পরিক পরিচয় হয়। মৃত হাবিব উল্লাহ যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত এবং ধৃত আসামী কামাল মীরা ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি প্রেস এর কারখানায় নৈশ প্রহরীর কাজ করত।

আসামী কামাল মীরা’র ১ম স্ত্রী তার সংসার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সে ২য় বিবাহ করার জন্য মনস্থির করে। তখন মৃত হাবিব উল্লাহ’র সাথে পরিচয় হলে তাকে ২য় বিবাহ করানোর মতো মেয়ে তার কাছে আছে বলিয়া প্রস্তাব করে। সেই সুবাদে আনুমানিক ১ মাসে আগে মৃত হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে নগদ ৬,০০০/- টাকা নেয় এবং গত ১০/০৭/২০২৫খ্রিঃ তারিখ মৃত হাবিব উল্লাহ মতলব উত্তর থানাধীন তার শ্বশুর বাড়ী এলাকায় আসামী কামাল মীরাকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে পুনরায় নগদ ৪,০০০/- টাকা নেয় এবং তারা উভয়ই বিকেলের দিকে মুরাদপুর এলাকা থেকে মতলব উত্তর থানা এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সন্ধ্যার সময় প্রথমে শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে আসে।

মাজারে অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করার পর আসামী কামাল মীরা মৃত হাবিব উল্লাহকে কখন মেয়ে দেখতে যাবে এই কথা বলে তাগিদ দিলে মৃত হাবিব উল্লাহ আসামীকে নিয়ে রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে। সেখানে বসে তাহারা উভয়ে গল্প করার সময় মৃত হাবিব উল্লাহ তাদের সাথে থাকা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। উভয়ের মধ্যে পুকুরের পাকা সিঁড়ির উপর ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

এই ধস্তাধস্তির ফলে তারা উভয়েই পাকা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে মুখমন্ডলসহ শরীরে জখম প্রাপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা উভয়েই পানিতে পড়ে যায়। আসামি কামাল মীরা হাবিবুল্লাহকে অতর্কিত তলপেটে ও অন্ডকোষ বরাবর লাথি মারলে হাবিবুল্লা যখন একটু দুর্বল হয়ে যায় তখন আসামি কামাল মীরা হাবিবুল্লাহ কে পানিতে চুবিয়ে ধরে। এই সময় মৃত হাবিবুল্লাহ আসামির ডান হাতের দুইটি আঙ্গুলে কামড় দিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামি সাঁতরে পুকুরের অপর প্রান্ত দিয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিগঞ্জ থানাধীন কদমতলী নামক এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মতলব উত্তর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।