রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর হতে চলেছে। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত প্রশাসন অনেক ‘মাস্টার প্ল্যান’ করেছেন। তারই অংশ হিসেবে অনেক ভবনও নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ভবনগুলো কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে করা হয়েছে? প্রশাসনের কাছে এমন প্রশ্ন রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নটি আরো জোরালো হয়েছে, সম্প্রতি হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ হয়েছে বলে মনে হয়না। শিক্ষার্থীদের কথা ভাবলে সাত দশকেও কেনো বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক হয়নি? প্রশ্ন তাদের। রাজশাহীর মেস ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে নাকি অন্য কোনো বিষয় এর সঙ্গে জড়িত সেটাও জানতে চান তারা। বর্তমান শিক্ষার্থীবান্ধব প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে ভাববেন বলে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় ছিলো। তখন একেক সরকারের একেকরকম চিন্তাভাবনা ছিলো। তবে বর্তমান সরকার খুব আগ্রহের সাথে এবিষয়ে চেষ্টা করছে। কারণ বর্তমানে দুটি হলের কাজ চলমান আছে এবং ভবিষ্যতে আরও এরকম হবে। তাছাড়া, চলমান পঞ্চাশ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যানেও শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার বিষয়টি রয়েছে।
এবিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৭০ বছর হয়ে আসলেও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে প্রশাসন কেনো কখনো শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা করেননি বা পরিকল্পনা হাতে নেননি? কী এমন হীনস্বার্থ ছিল বা আছে এর পেছনে? রাজশাহীর মেস ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে নাকি অন্য কোনো বিষয়?’
শিক্ষার্থীরা আর কতদিন ভুক্তভোগী হবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন,’সারাজীবন ক্ষমতাসীনরা হলের সিটের জন্য শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখে। আজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, অতীতে এসেছিলো ছাত্রদল, শিবিরের বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় থাকবেন তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আসবে। তাহলে কি হাজার বছর ধরে চলবে এই কাহিনী, যার একমাত্র ভুক্তভোগী হবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা!’
বর্তমান প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে ভাববে প্রত্যাশা করে তিনি বলেন,’অনেক দেরি হয়েছে, আর নয়, এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আপনারা ভাবুন, পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। হয়তো রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে চেষ্টা করুন, ৮-১০ বছরেই সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়টিকে শতভাগ আবাসনের ব্যবস্থা করা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এটার জ্বলন্ত উদাহরণ।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাদমান সাকিব নিলয় বলেন,’প্রতিষ্ঠার সাত দশক পেরিয়ে গেলেও দুঃখজনকভাবে রাবির আবাসিকতার অনুপাত ১ঃ৫। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই রাজশাহীর বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে আসে। শিক্ষার্থীর তুলনায় হলে সিট সংখ্যা কম হওয়ায়, হলে উঠা ও উঠানো বিষয়ে অসুস্থ প্রতিযোগীতা চলে। এক্ষেত্রে হলে উঠার ক্ষেত্রে নানান বৈষম্য এর শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।’
তিনি আরো বলেন, ‘আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত অস্বচ্ছল পরিবারের একজন শিক্ষার্থীকে কেনো সিটের জন্য তদবির কিংবা হলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে আবাসনের অপেক্ষায় দুশ্চিন্তার প্রহর গুনতে হবে? এভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। জ্ঞান অর্জনে মৌলিক চাহিদার বাধা থাকাটা দুঃখজনক। আমি আশা করি, রাবির আবাসন সমস্যা দূরীকরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নজর দিবে।’
শতভাগ আবাসন বিষয়ে রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন,’সম্পূর্ণ আবাসিকতা নিশ্চিত করা গেলে তো ভালোই হয়। কিন্তু এর সাথে একটা বড় অংকের অর্থ ও সরকারি সিদ্ধান্ত জড়িত রয়েছে। এগুলোসহ নানা কারণে হয়তোবা সম্পূর্ণ আবাসিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে দুইটি হলের কাজ চলছে। এদুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে অনেকখানি সমস্যার সমাধান হবে। আর সম্পূর্ণ সমস্যার সমাধান করতে কিছুটা সময় লাগবে, এটা সবারই বোঝার কথা।’
শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ আবাসিকতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রশাসনের মাস্টারপ্লানে আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন,’ ‘অবশ্যই, শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ আবাসিকতা নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের মাস্টারপ্লানে আছে।’
সাত দশকেও রাবি সম্পূর্ণ আবাসিক না হওয়ার পিছনে স্থানীয় মেস মালিকদের প্রভাব থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’এরকম কিছু আছে কিনা, না জেনে আমি কিছু বলতে চাইনা। যারা অভিযোগ করেছে, তারা আমার থেকে বেশি জানতে পারে। তবে,শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।’