খাগড়াছড়িতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে দুই সপ্তাহে ৪ শিশুর মৃত্যু
খাগড়াছড়িতে ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতজনিত ও আবহাওয়াজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১৫ দিনের ব্যবধানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ শিশু মারা গেছেন।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা থাকলেও বর্তমানে ভর্তি রয়েছে অন্তত ৬২ জন রোগী। ধারণক্ষমতার চারগুণ বেশি রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। প্রতিদিন বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকশ রোগী। ভর্তি শিশুদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও বমিজনিত রোগে আক্রান্ত।নিউমোনিয়ায় মৃত শিশুদের মধ্যে রয়েছেন অনেষ্কা চাকমা, এসান ত্রিপুরা, মনিকা ত্রিপুরা ও মানতা চাকমা।হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন বাচ্চাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। এখানে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তবে হাসপাতালের ভেতরে জায়গা খুব কম হওয়ায় অনেককে ফ্লোরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশের হাসপাতাল ভবনের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। আমাদের চিকিৎসা নিতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত যদি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হতো, আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসা নিতে পারতাম।’হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের জনবল রয়েছে ১০০ শয্যার। ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী সামাল দিতে দ্রুত নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রিয়াঙ্কা রানী ভৌমিক।তিনি আরও বলেন, ‘এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে। স্থানসংকুলান না হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের এখানে ১৫ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৬২ জন। বাধ্য হয়ে অনেককে ফ্লোরে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত শেষ হলে আমরা রোগীদের আরও ভালোভাবে সেবা দিতে পারব।’চলতি মৌসুমে দুই সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দিন দিন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. মো. ওমর ফারুক।তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের এখন বাড়তি যত্ন নিতে হবে।’খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রিপল বাপ্পী চাকমা বলেন, দিনে ও রাতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আতঙ্কিত না হয়ে অভিভাবকদের শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক। বাচ্চাদের শরীর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।