কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার খোকসায় উন্নয়নকাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তে ৬ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও স্কুলগুলোর পরিচালনা কমিটির সভাপতি, দুই সহকারী শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়ার পর মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন খোকসা উপজেলার ৮০ নম্বর মাছুয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকর্ণ কুমার বিশ্বাস, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাবুল আখতার, ২৬ নম্বর বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাছুরা পারভীন ও সভাপতি ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস, ৭২ নম্বর মামুদানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার বিশ্বাস ও সভাপতি মহিমা রঞ্জন মৈত্র, ৩০ নম্বর ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুল হক ও সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বেলাল।
জানা যায়, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে উপজেলার ৮৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৩ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ আসে। বরাদ্দের অর্থ দিয়ে কাজ না করেই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, শিক্ষক সমিতির নেতা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ভুয়া বিল-ভাউচারে অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবলু আখতারসহ অন্যান্য স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা, প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রকৌশলী সবাই এ অর্থের ভাগ পান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রধানের স্বাক্ষরে এই অর্থ উত্তোলন হয় বলে জানা গেছে। উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী মিলে এ কাজের পরিকল্পনা করেন। তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করার নিয়ম রয়েছে। কাজ শেষে পরিদর্শন করে প্রকৌশলী প্রত্যয়নপত্র দেবেন এমন বিধান আছে। তবে খোকসার ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছে। কাজ হয়েছে কি না, পরিদর্শন না করেই বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপপরিচালক জাকারিয়া সরেজমিন তদন্ত করে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কোনো কাজ হয়নি দেখতে পান। দুদক কর্মকর্তারা তদন্তকালে ওই সব স্কুলে মাটি ভরাটসহ অন্য যেসব সংস্কারকাজ হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি বলে জানতে পারেন। তদন্ত শেষে মামলার আরজি জানিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কয়েক দিন আগে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে মামলা করার পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু হানিফ দুদক কর্মকর্তাকে ম্যানেজের কথা বলে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিরাও জানতেন। তাঁরাও ম্যানেজ করার পক্ষে মত দেন। তবে দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে না পারলেও আবু হানিফ যে অর্থ তুলেছিলেন তা আর ফেরত দেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কীভাবে কাজ বাস্তবায়িত হবে তার পরিকল্পনা করে দেওয়া আমাদের কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু জানা নেই। কাজ করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের।’
অভিযোগের বিষয়ে খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি বাবুল আখতার বলেন, ‘শিক্ষক নেতা আবু হানিফ সব অপকর্মের হোতা। আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। তারা সব করেছে।’
শিক্ষক নেতা আবু হানিফ বলেন, দুদক প্রতিটি স্কুলে গিয়ে তদন্ত করেছে। কে কতটুকু কাজ করেছে তা যাচাই করেছে। এরপর হয়তো মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ম্যানেজ করার নামে টাকা তোলার যে অভিযোগ উঠছে তার কোনো সত্যতা নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নাজনীন আলম বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমার জানা নেই। চিঠি পেলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’