গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সহিংসতা: র্যাগিং–ধর্ষণকাণ্ডের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে দুই দফা হামলা
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ধর্ষণ এবং র্যাগিং–সংকটের মধ্যে ফের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে রসায়ন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নাসিম (২২)–এর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানেও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাকে আবারও মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাসিমকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
—
ভুক্তভোগীর অভিযোগ: “ধর্ষণ মামলায় অবহেলার প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করা হয়েছে”
হাসপাতাল থেকে নাসিম বলেন—
“ধর্ষণের ঘটনার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসন তা আমলে নেয়নি। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে আমরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছি। আজ ক্যাম্পাসে যেতেই রাজিবসহ কয়েকজন আমাকে ডেকে ‘সন্ত্রাসী’ মন্তব্য নিয়ে জিজ্ঞাসা করে। আমি বলি— ধর্ষক ও র্যাগিংকারীদের সন্ত্রাসী বলেছি। হঠাৎ তারা আমাকে মারধর শুরু করে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন—
“হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বাইরে ডেকে ৪–৫ জন আবার আমাকে আক্রমণ করে।”
ভিডিওতে দেখা যায়—এক শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন নাসিমকে প্রশ্ন করতে করতে হঠাৎ ঘুষি মারেন, পরে অন্যরা যোগ দেয়।
—
অভিযুক্তদের বক্তব্য: ব্যক্তিগত ক্ষোভ, আন্দোলন নয়
ভিডিওতে দেখা প্রধান অভিযুক্ত রাজিব হোসেন বলেন—
“অনেকদিন ধরে সে (নাসিম) আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা ট্যাগিং করে। ধাক্কার পর হাতাহাতি হয়েছে। আন্দোলন বা শিক্ষকদের ইস্যু না।”
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আবির হোসেন দাবি করেন—
“ডিন ম্যামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা আগে আমাদের ওপর হামলা করে। মেয়েরা পিছনে ছিল—তাদের বাঁচাতে আমরা প্রতিরোধ করেছি।”
—
ডিনের অবস্থান: “মিছিল সম্পর্কে জানতাম না”
অভিযোগে নাম আসা কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন—
“কে মিছিল করেছে জানি না। আমরা মিটিংয়ে ছিলাম। পরে বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেছি। কেউ আমার পদত্যাগ দাবিও করেনি।”
—
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবুল হোসেন বলেন—
“আন্দোলনের সময় নিচে তালা দেওয়া থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। হামলাটি নিন্দনীয়। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
—
সাম্প্রতিক সংঘাতের ধারাবাহিকতা
গণ বিশ্ববিদ্যালয় বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থিরতায় রয়েছে:
২৪ নভেম্বর: র্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার, ১৭ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা।
২৪ নভেম্বর: গণধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার চার শিক্ষার্থী স্থায়ী বহিষ্কার।
৩০ নভেম্বর: শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে ক্যাম্পাসে মারধর।
৭ ডিসেম্বর: নাসিমকে দুই দফা হামলা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—প্রশাসনের অবহেলা, দুর্বল নিরাপত্তা এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যর্থতা বারবার সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে।
—
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তীব্র হচ্ছে
মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের দাবি—
● নাসিমের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার
● ধর্ষণ ও র্যাগিংকাণ্ডে প্রশাসনিক অবহেলার স্বাধীন তদন্ত
● অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাময়িক অব্যাহতি
● ক্যাম্পাসে জিরো–টলারেন্স ভিত্তিক নিরাপত্তা প্রটোকল
● অভিযোগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বতন্ত্র মনিটরিং সেল
বলা হচ্ছে—
“দ্রুত ও কঠোর শাস্তি না দিলে ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও দোষীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি আরও গভীর হবে।”


























