শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বিজ্ঞান গবেষণাকে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুব জরুরি। গবেষণায় একাডেমিক-ইন্ডাস্ট্রির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। বাণিজ্যিকীকরণের জগতের সঙ্গে বিজ্ঞানীর চিন্তা জগতের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে।
আজ রবিবার দুপুরে যবিপ্রবির শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামে ‘মতবিনিময়, উদ্ভাবন ও শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি যবিপ্রবিতে ১০-তলা বিশিষ্ট স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন। এর পরপরই যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ‘যবিপ্রবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন’ উদ্বোধন করেন। স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষামন্ত্রী একটি কৃষ্ণচূড়ার চারাও রোপণ করেন। এর আগে সবাইকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী যবিপ্রবির প্রধান ফটকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হওয়া মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রির বাস্তব প্রয়োগের জ্ঞানই শুধু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন নয়, গবেষণার জন্যই ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমির লিংকেজ বা মেলবন্ধন ভীষণভাবে জরুরি। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইন্ডাস্ট্রির জন্য উদ্ভাবন করে এবং সেখান থেকেই তাদের অধিকাংশ ফান্ড আসে। এ বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধরনের কার্যক্রম অনেক বেশি সম্ভব। কারণ বিজ্ঞান ও গবেষণায় আপনারা এগিয়ে আছেন। এখানে বড় ধরনের ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে স্টার্ট-আপ শুরু করে সেখান থেকে বড় সাপোর্ট পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতার বিশ্বে যোগ্যতাই হচ্ছে টিকে থাকার মূলমন্ত্র। এ জন্য যোগ্য হতে হবে। আমার মনে হয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই যোগ্যতা রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সকল ক্ষেত্রেই আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আজ সকালে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যশোর এসেছি। এটি এক সময় অকল্পনীয় ছিল। এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা লাগছে না। এখানে যারা সবজি কিংবা ফুল উৎপাদন করছেন, তাদের আর ফেরির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না, কষ্টও হচ্ছে না।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, বিজ্ঞান ও ও প্রযুক্তি হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু ভূমি প্রয়োজন। আমাদের কাছে আবেদন দিলে আরও যতখানি জমি দেওয়া সম্ভব, সেটি যেন দ্রুত পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করব। যবিপ্রবিতে ক্রিকেট গ্রাউন্ড, টেনিস কোর্ট, একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের স্থাপনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও যথাযথ স্থানে কথা বলারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘তোমাদের রাজনীতি সচেতন হবে, সক্রিয় হতে হবে। তবে রাজনীতি একটি ইতিবাচক বিষয়। এর মধ্যে নেতিবাচকতা যেন না আসে। মানুষের মন জয় করে রাজনীতি করতে হবে। এর জন্য ইতিবাচক রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও যবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, যবিপ্রবি এখন এ অঞ্চলের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স-’এ পরিণত হয়েছে। এ জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় সুযোগ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। একই সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণে সার্বিক সহযোগিতার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা চাকরি চাই না, চাকরি দিব’–এ স্লোগানকে সামনে রেখেই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন ও মিশন নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের একাডেমিক কারিকুলামে তার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। শুধু দক্ষ জনশক্তি নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ জন্য ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া পার্টনারশিপ, অ্যাকাডেমিয়া-গভর্নমেন্ট-ইন্ডাস্ট্রি পার্টনারশিপকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, প্রযুক্তি উন্নয়নে মাল্টি ন্যাশনাল পার্টনারশিপেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছেন।
এ ছাড়া তিনি যবিপ্রবির ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, গবেষণা প্রকল্প অনুমোদনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সেলিনা আক্তারও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উদ্ভাবনে বিশেষ অবদানের জন্য যবিপ্রবির শিক্ষক ড. মো. জাভেদ হোসেন খান ও ড. মো. আমিনুল ইসলাম; শুদ্ধাচার পুরস্কারে শিক্ষক ক্যাটাগরিতে ড. সেলিনা আক্তার ও ড. মো. মুনিবুর রহমান; কর্মকর্তা ক্যাটাগরিতে রানা সিংহ ও মো. রোকনুজ্জামান এবং কর্মচারী ক্যাটাগরিতে বৈশাখী রায় ও মো. নাসিম রেজাকে ফুল, ক্রেস্ট, চেক ও সনদ তুলে দেন।