উৎপল দাস:গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে উপ নির্বাচনের তারিখ চলতি সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হবে। তবে এই উপ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সবচে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যেই ইমেজ সৃষ্টি করেছেন রিপন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশই তাকে সমর্থনও দিচ্ছে।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে শূন্য আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ৬জন প্রার্থী। তবে তাদের মধ্যে সবচে এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।
মাহমুদ হাসান রিপনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মেয়ে এবং ফুলছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলী, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার। এছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আলম সরকার ও সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জুর নামও শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন। ফলে তার নেতৃত্বে আস্থাশীল হয়ে বিচ্ছিন্ন ও ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে নবউদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। আর নির্বাচিত হলে প্রথমেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টানেল নির্মাণে উদ্যোগী হবেন। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবেন। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম হিরু বলেন, ‘সাঘাটা-ফুলছুড়িতে রিপন (মাহমুদুল হাসান রিপন) ইজ রাইট পারসন। সে একজন ছাত্রনেতা ছিল। রাজপথে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। এলাকায়ও তাঁর একটা ভালো অবস্থান রয়েছে।’
সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ‘মাহমুদুল হাসান রিপন ভালো ছেলে। বিভিন্ন কাজ বের করে এলাকার জন্য কাজ করে। উপনির্বাচনে রিপনকে মনোনয়ন দিলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’
সাঘাটা আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল আরেফিন টিটু বলেন, ‘রিপনের সাঘাটা-ফুলছড়িতে একটা ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তরুণ সমাজের কাছেও তাঁর ভালো একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সে মনোনয়ন পেলে সহজেই নৌকা জয়ী হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই মাহমুদ হাসান রিপনের পক্ষে আওয়ামী লীগের মূল ধারার নেতাকর্মীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন এবং সাধারণ ভোটাররাও রিপনকে ভোট দিবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধা ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের একাংশের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছিল সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
ইতিমধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা ৫ আসনের উপ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে গত ২৩ জুলাই। এদিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিন বলতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। এ হিসেবে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে উপ-নির্বাচনটি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গত ২৪ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালামের আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ০৮ শ্রাবণ ১৪২৯/২৩ জুলাই ২০২২ তারিখ মৃত্যুবরণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদের ৩৩ গাইবান্ধা-৫ আসনটি ওই তারিখে শূন্য হয়েছে।
ইতোমধ্যে আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছেছে। তার ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজও শুরু করে দিয়েছে সংস্থাটি। জানা গেছে, কমিশনের বৈঠকের আলোচন্যসূচিতে গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনে উপনির্বাচন, ইভিএম ও বিবিধ আলোচ্যসূচিতে ছিল।