প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাচ্ছে আরও ৪০ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দুই শতাংশ জমিসহ নতুন ঘর তুলে দেওয়া হবে এসব পরিবারের হাতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারা দেশের উপকারভোগী পরিবারগুলোর কাছে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। চতুর্থ পর্যায়ে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশের ৯টি জেলার ২১১টি উপজেলা সম্পূর্ণরূপে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি ঘর দেয়া হবে। এর আগে তিন দফায় এক লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হয়।
গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানান, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় দুই শতাংশ জমি দলিল ও নামজারি করে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা এই জমির পুরোপুরি মালিকানা পাচ্ছেন। তবে শর্তানুসারে তারা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক দিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে গৃহ সংস্কারের প্রয়োজন হলে মালিকানা হিসেবে তারাই সেটা করবেন।
মুখ্য সচিব জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ জন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি, তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ২১ জুলাই ২৬ হাজার ২২৯টি এবং চতুর্থ পর্যায়ে বুধবার (২২ মার্চ) ৩৯ হাজার ৬৬৫টি ঘর হস্তান্তর হচ্ছে। এতে করে চিহ্নিত ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৩৭টি পরিবারের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর সম্পন্ন হচ্ছে। অবশিষ্ট ৪৩ হাজার ৪১০টি পরিবারের মধ্যে ২২ হাজার ১০টি পরিবার চিহ্নিত করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই শতাংশ জমিসহ একক গৃহ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাকি ২১ হাজার ৪০৪টি পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে ‘দেশের কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ বলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে।
মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পরিবার প্রতি ৫ জন হিসেবে এ কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরাসরি পুনর্বাসন করেছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবার (প্রায় ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ জনকে)। ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সমধর্মী কার্যক্রমের আওতায় পুনর্বাসিত হয়েছে অবশিষ্ট ২ লাখ ১৬ হাজার ৭০৪ টি পরিবার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ ৩১ হাজার ৩ শত ৬৫টি একক গৃহ হস্তান্তর করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশের সকল উপজেলায় একযোগে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষদের কাছে এ সকল গৃহ হস্তান্তর করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে সরাসরি ৩টি উপজেলায় উপকারভোগীদের সাথে তিনি মতবিনিময় করবেন। উপজেলাগুলো হলো গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প; সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার বানারিপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে দেশের ২১১টি উপজেলা। এরমধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের ৩২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, দৌলতপুরসহ বেশ কিছু উপজেলাও গৃহহীনমুক্ত হবে।
রাজশাহী : রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীর তিনটি জেলাসহ ৩২টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত পরিবার ঘোষণা করবেন। এগুলো হলো রাজশাহী জেলার পবা, গোদাগাড়ী, তানোর, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও বাগমারা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট ও নাচোল। জয়পুরহাট জেলার সদর, আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা। এ ছাড়া রয়েছে বগুড়া জেলার কাহালু, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা ও শিবগঞ্জ। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট, মহাদেবপুর ও পত্নীতলা উপজেলা। সিরাজগঞ্জ জেলার সদর, উল্লাপাড়া, কাজীপুর ও রায়গঞ্জ উপজেলা। পাবনা জেলার সদর, আটঘরিয়া ও সাঁথিয়া উপজেলা এবং নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্ৰাম ও লালপুর উপজেলাকেও ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন জানান, বুধবার সকাল ৯টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের মতো গৌরীপুর উপজেলার উপকারভোগীদের মাঝে ২১টি গৃহ হস্তান্তর করে এ উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত এলাকা ঘোষণা করবেন।
লালমনিরহাট : ৩০ জুনের মধ্যে লালমনিরহাট জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ উল্লাহ।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান জানান, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলাকে গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় ৩৬৭টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্যে সদরে ৩১টি, সিংগাইরে ১৬৩টি, শিবালয়ে ৬২টি, হরিরামপুরে ৭৭টি এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৩৪টি। একই সঙ্গে সিংগাইর ও দৌলতপুর উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হবে।
ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, জেলার নগরকান্দা উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করার পর এবার জেলার আলফাডাঙ্গা ও সালথা এ দুটি উপজেলাকেও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
চকরিয়া( চট্টগ্রাম) : চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানান, উপজেলাটিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন লোক না থাকায় আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৭০টি উপজেলার মতো চকরিয়াকেও ভূমিহীন ও গৃহহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।
শেরপুর : টাস্কফোর্স কমিটি ও বিভিন্ন দপ্তরের যৌথসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শেরপুরের নকলা, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার।
১৯৯৭ সাল থেকে এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭ টি পরিবার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ৭১ লাখ ৩০১ টি পরিবারকে। পাঁচ জন এক পরিবার হিসেবে সেই জনসংখ্যা ৩৮লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ জন।
তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হয়েছে গত বছরের ২৬ এপ্রিল এবং ২য় ধাপে ২১ জুলাই জমির মালিকানাসহ ২৬ হাজার ২২৯টি হস্তান্তর করা হয়। আগামীকাল ২২ মার্চ চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর হচ্ছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর।
১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়সহ মোট হস্তান্তরিত একক গৃহের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। ৪র্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন গৃহের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। ৪র্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩ টি এবং পার্বত্যঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪ টি।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার উপর ছাদ পায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩৩০টি গৃহহীন পরিবার ঘর পায়। তৃতীয় পর্যায়ের দুই ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল উপজেলাসহ সারা দেশের মোট ১৫৯টি উপজেলা