চট্টগ্রামের উন্নয়ন হলে সারাদেশের উন্নয়ন হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৬ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা। আমাদের বাণিজ্য নগরী। সুতরাং চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন করতে পারলে সারা বাংলাদেশই উন্নত হবে। এতে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বিরাট অবদান রয়েছে।
তিনি বলেন, পানি নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষের অনেক অসুবিধা ছিল। এটা শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের প্রায় জেলায় এ সমস্যা রয়েছে। আমরা সরকারে আসার পর থেকে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি এ সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর চট্টগ্রামে পানির সমস্যা সমাধানে আমরা প্রকল্প হাতে নিই। ১৯৯৯ সালে জাইকা কর্ণফুলী নদী থেকে পানি শোধন করে সরবরাহের প্রকল্প গ্রহণ করে এবং সমীক্ষা করে। ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। তাই কাজটিও সম্পন্ন হয়নি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর ২০১১ সালে আবার আমরা উদ্যোগ নিই এবং কাজ শুরু করি। চট্টগ্রামে ২০১৭ সালে প্রথম পানি শোধনাগার-১ চালু করা হয়। এতে চট্টগ্রামে নগরে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। তবে স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে আমরা আরও একটি উদ্যোগ নিই। ২০২০ সালে মদুনাঘাটে ৯ হাজার কোটি লিটার ধারণক্ষমতার শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উদ্বোধন করি।
চট্টগ্রামে আরও ৫টি পয়োশোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প প্রথম পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে আরও ৫টি পয়োশোধানাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে বৃষ্টির পানি যাতে সংরক্ষণ করা হয়। যখনই আপনারা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই যাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধুমাত্র পানি শোধন করে দিবো তা না, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা এবং তা ব্যবহার করা একান্তভাবে দরকার।
কর্ণফুলী নদীর দূষণরোধে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে যেহেতু ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে, কাজেই কর্ণফুলী, হালদা, সাঙ্গুসহ যে কয়টি নদী আছে সেগুলো যাতে কোনোভাবে দূষণ না হয়। দূষণের হাত থেকে সেগুলি রক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
এসময় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শহরকে সুরক্ষিত রাখতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ওই অঞ্চলটা সুরক্ষিত থাকবে এবং পর্যটনের দিক থেকে সুবিধাও হবে। চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও সৌন্দর্য রক্ষা করে যেন সার্বিক উন্নয়ন হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন কর্ণফুলী টানেল
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টানেল নির্মাণ হোক এটি তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী) চেয়েছিলেন। তাঁর এটা দাবিও ছিল। এ টানেলের কাজ প্রায় এখন সমাপ্তির পথে। দুর্ভাগ্য, তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। বাংলাদেশে যতগুলি সিটি করপোরেশন করা হয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আমলে ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকোশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সমসাময়িক দেশ পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যদি আমরা তুলনা করি, তাহলে আমরা দেখি অর্থনৈতিক সকল প্যারামিটারে আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে আছি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত বাংলাদেশ হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর বা জেলা। চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোন হচ্ছে। যেখানে হাজার হাজার মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। সে প্রজেক্টগুলো বস্তবায়নের জন্য কি কি প্রয়োজন সেগুলোর সবকিছু নিয়ে সমন্বিত প্রজেক্ট করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছেন। এত বড় প্রকল্পে সুপেয় পানির যোগান দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে যদি পানির অনুবিধা হয়, তাহলে মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুধু মিরসরাইয়ের জন্য না, আরও একশটি ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে; সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একসময় চট্টগ্রাম ডাস্টবিন ছিল। মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি উদাহরণ দেওয়ার মত নগরী সৃষ্টি করেন।
শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ ছাড়াও পানি শোধনাগার-১ ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এতে ওয়াসার পানি সরবরাহে সক্ষমতা বেড়েছে ৫০ কোটি লিটার।
প্রায় ৪ হাজার ৪৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয় এ প্রকল্প। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৮৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।