ঢাকা , শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
৭ গোলের ম্যাচে হংকংয়ের কাছে বাংলাদেশের হার রাণীশংকৈলে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালিত। ফরিদগঞ্জে আলহাজ্ব এম এ হান্নানকে ধানের শীষের প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে উপজেলা ও পৌর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের গণমিছিল জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা, নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা দেবিদ্বারে মাদক সেবনের দায়ে দীপংকরের কারাদণ্ড চানখারপুল হত্যাযজ্ঞ: সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আশুলিয়ায় জামগড়া আর্মি ক্যাম্প সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও একটি বিদেশি অত্যাধুনিক শট গান সহ ৩ জনকে আটক করেছে RAW জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে : এম এ মালিক ‘আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী’ ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ৭ বাংলাদেশির

চট্টগ্রাম বন্দর: দুর্নীতি খুঁজতে শুধু কর্মকর্তা বদল

সাংবাদিক

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চট্টগ্রাম বন্দরের প্রভাবশালী পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ওই অভিযোগের ওপর তেমন কোনো কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। অভিযোগের এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা আসে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু অনুসন্ধানপর্ব শুরু হলে একের পর এক কর্মকর্তা বদল হতে থাকে। এতে গতি পাচ্ছে না তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর তৎকালীন উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম চট্টগ্রাম বন্দরের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে আতিকুল আলম বদলি হয়ে গেলে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পড়ে আরেক তৎকালীন উপপরিচালক আহসানুল কবীর পলাশের ওপর। উপপরিচালক হিসেবে আহসানুল কবীর পলাশ গত এপ্রিলের শেষ দিকে চট্টগ্রামে যোগদান করার পর অনুসন্ধান কার্যক্রমে হাত দেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরিদর্শন করেন। কিন্তু গত জুলাইয়ের শেষ দিকে তিনিও বদলি হয়ে যান। সর্বশেষ দায়িত্ব পড়ে উপসহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিনের ওপর। তিনি শিগগিরই অনুসন্ধানকাজে হাত দেবেন বলে জানিয়েছেন।

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ফাইলটা পেয়েছি। দ্রুত কাজ শুরু করব। বিষয়গুলো যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের, তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর ও দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পায় দুদক। ওই পাঁচজন হলেন চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিভাগের উপসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম, জাহাজ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন, সিবিএর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (৫ আগস্টের পর অনুপস্থিত) নায়েবুল ইসলাম ফটিক, নৌ বিভাগের প্রথম শ্রেণির মাস্টার ইব্রাহিম সেলিম ও ট্রাফিক বিভাগের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের সহকারী পরিবহন পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম (রনি)। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, কর্মস্থলে প্রভাব, দুর্নীতি করে সম্পদ গড়া, জাহাজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর তৎকালীন উপপরিচালক মো. আতিকুল আলমের সই করা এক চিঠিতে তাঁর কার্যালয়ে ২১ জানুয়ারির মধ্যে হাজির হয়ে কাগজপত্র জমা ও তাঁদের বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। চিঠির সূত্র ধরে তাঁরা ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত হাজির হয়ে তাঁদের দলিলপত্র দুদকে জমা দিয়েছেন। উল্লিখিতদের দুদকে তলবসংক্রান্ত চিঠিতে ‘বিশাল পাহাড়সমান’ দুর্নীতি করার অভিযোগের কথা বলা হয়েছিল। আতিকুল আলমের বদলির পর থমকে যায় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। বদল হয় আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে বন্দরের নৌ বিভাগের উপসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে কি চোর বলা যাবে?’

৫ আগস্টের পর নায়েবুল ইসলাম ফটিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বন্দরের জাহাজ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি জাহাজ কেনায় দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আসার পর আমি ফেস করেছি। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। কারণ, ওই জাহাজ কেনার সাথে আমার জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, আপনারা আমাকে তথ্য দেন। যেহেতু সামনে তাঁদের পদোন্নতির বিষয় আছে, তাই এই অভিযোগগুলো বিবেচিত হতে পারে।’

সূত্রঃ প্যাসেঞ্জার ভয়েস

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৬:২৭:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৫৬১ Time View

চট্টগ্রাম বন্দর: দুর্নীতি খুঁজতে শুধু কর্মকর্তা বদল

আপডেটের সময় : ০৬:২৭:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চট্টগ্রাম বন্দরের প্রভাবশালী পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে ওই অভিযোগের ওপর তেমন কোনো কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। অভিযোগের এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা আসে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। কিন্তু অনুসন্ধানপর্ব শুরু হলে একের পর এক কর্মকর্তা বদল হতে থাকে। এতে গতি পাচ্ছে না তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর তৎকালীন উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম চট্টগ্রাম বন্দরের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে আতিকুল আলম বদলি হয়ে গেলে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পড়ে আরেক তৎকালীন উপপরিচালক আহসানুল কবীর পলাশের ওপর। উপপরিচালক হিসেবে আহসানুল কবীর পলাশ গত এপ্রিলের শেষ দিকে চট্টগ্রামে যোগদান করার পর অনুসন্ধান কার্যক্রমে হাত দেন। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরিদর্শন করেন। কিন্তু গত জুলাইয়ের শেষ দিকে তিনিও বদলি হয়ে যান। সর্বশেষ দায়িত্ব পড়ে উপসহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিনের ওপর। তিনি শিগগিরই অনুসন্ধানকাজে হাত দেবেন বলে জানিয়েছেন।

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ফাইলটা পেয়েছি। দ্রুত কাজ শুরু করব। বিষয়গুলো যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের, তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দর ও দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পায় দুদক। ওই পাঁচজন হলেন চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ বিভাগের উপসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম, জাহাজ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন, সিবিএর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (৫ আগস্টের পর অনুপস্থিত) নায়েবুল ইসলাম ফটিক, নৌ বিভাগের প্রথম শ্রেণির মাস্টার ইব্রাহিম সেলিম ও ট্রাফিক বিভাগের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারের সহকারী পরিবহন পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম (রনি)। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্য, কর্মস্থলে প্রভাব, দুর্নীতি করে সম্পদ গড়া, জাহাজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এর তৎকালীন উপপরিচালক মো. আতিকুল আলমের সই করা এক চিঠিতে তাঁর কার্যালয়ে ২১ জানুয়ারির মধ্যে হাজির হয়ে কাগজপত্র জমা ও তাঁদের বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। চিঠির সূত্র ধরে তাঁরা ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত হাজির হয়ে তাঁদের দলিলপত্র দুদকে জমা দিয়েছেন। উল্লিখিতদের দুদকে তলবসংক্রান্ত চিঠিতে ‘বিশাল পাহাড়সমান’ দুর্নীতি করার অভিযোগের কথা বলা হয়েছিল। আতিকুল আলমের বদলির পর থমকে যায় অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। বদল হয় আরও কয়েকজন কর্মকর্তা।

অভিযোগের বিষয়ে বন্দরের নৌ বিভাগের উপসংরক্ষক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে কি চোর বলা যাবে?’

৫ আগস্টের পর নায়েবুল ইসলাম ফটিক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বন্দরের জাহাজ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি জাহাজ কেনায় দুর্নীতিসংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আসার পর আমি ফেস করেছি। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। কারণ, ওই জাহাজ কেনার সাথে আমার জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মামুনুর রশিদ বলেন, ‘উল্লিখিতদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, আপনারা আমাকে তথ্য দেন। যেহেতু সামনে তাঁদের পদোন্নতির বিষয় আছে, তাই এই অভিযোগগুলো বিবেচিত হতে পারে।’

সূত্রঃ প্যাসেঞ্জার ভয়েস