সাতকানিয়া প্রতিনিধি
মোহাম্মদ হোছাইন
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১টি বসত ও ৬টি গোয়ালঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে মেয়ের বিয়ের সরঞ্জাম, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, নতুন-পুরাতন আসবাবপত্র ও ঘরে অন্যান্য জিনিসপত্রসহ ৩৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার(১১ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মরফলা ভরা দিঘীর পূর্ব পাড়ে কামাল কোম্পানীর বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার ১৫ ঘন্টা অতিক্রম হলেও জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও সমাজের বিত্তশালীরা কেউ এগিয়ে না আসায় বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্থরা খোলা আকাশের নীচে মানবেতর কালযাপন করছেন।
তবে নব নির্বাচিত নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে নতুন ঘর নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া নলুয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন কোম্পানীর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের রাত ও স্থানীয়রা দুপুুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দৈনন্দিন কাজ শেষে যে যার মত ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ করে দিবাগত রাত ১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুনের লেলিহান শিখা টিনের চালা-বেড়া ও সেমিপাকা ঘরগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ২ ঘন্টা স্থায়ী আগুনে ১১টি বসত ও ৬টি গোয়াল ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে নগদ ৫ লক্ষাধিক টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, নতুন-পুরাতন আসবাব ও ঘরের অন্যান্য জিনিসপত্র সহ ৩৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ঘরগুলোর মালিকরা হলেন, দিদারুল আলম, আব্দুল মান্নান, এনামুল হক, জাগির হোসেন, নুরুল আলম, আব্দুল খালেক, সাইর আহমদ, আব্দুল হামিদ, শহিদুল ইসলাম, মঞ্জুর আলম, ও শামসুল ইসলাম।
এদের মধ্যে আগামীকাল (রবিবার) আব্দুল খালেকের মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য্য ছিল।
ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে প্রায় ঘরের মালিকরা রিক্সা চালক, প্রবাসী ও কৃষক।
এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল খালেক বলেন, আগামীকাল( রবিবার) আমার মেয়ের বিয়ে। বিয়ের খরচ বাবদ ঘরে ছিল নগদ দেড় লাখ টাকা, মেয়েকে দেয়ার জন্য ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও নতুন আসবাবপত্র। এছাড়া বর যাত্রীদের খাওয়ানোর জন্য ঠিক করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারও। এ আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি পথের ভিখারী। কিভাবে আমি মেয়েকে বিয়ে দিব। আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। এখনো পর্যন্ত সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি। সব মিলিয়ে আমার ৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে নলুয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক এলাকার লোকদের সাথে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরের পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্ঠা করি। তবে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে আলাপকালে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে ৩৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এখনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি।
এ ব্যাপারে নলুয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তছলিমা আক্তারকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে নলুয়া ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী বলেন, রাতে আমি আগুন লাগার খবর পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সহায়তা দিব। এছাড়া নতুন ঘর নির্মাণসহ তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করব।
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র ষ্টেশন কর্মকর্তা এস এম হুমায়ুন কার্ণানায় বলেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি এখন ছুটিতে আছি। কাল (রবিবার) অফিসে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিব। তবে নলুয়ার চেয়ারম্যান আমাকে এখনো কিছুই জানাইনি এবং অফিসিয়াল ফোনও করেনি।