সাতকানিয়া প্রতিনিধি ,মোহাম্মদ হোছাইন:
বিগত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কিছু কিছু অঞ্চলে কালোজিরা ধানের চাষ শুরু হয়েছে। দেশের খাদ্যঘাটতি পূরনের জন্য না হলেও দেশে কিছু অভিজাত জনগোষ্ঠির চাহিদা পূরনের জন্য কালোজিরা ধান চাষ শুরু করেছেন এলাকার কৃষকরা। চলতি আমন মৌসূমে ধান খেতে কালোজিরা ধানের অতিফলন এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। উপজেলায় ব্যাপকহারে কালোজিরা ধানের চাষ করা হয়নি। তবুও যে সমস্ত কৃষক এ ধান চাষ করেছেন তাদের খেতের ফলন দেখে অন্যান্য কৃষকরাও কালোজিরা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক আগামী মৌসূমের জন্য বীজ সংগ্রহ করা শুরু করেছেন।সাধারন ধানের চেয়ে ৪ গুন দাম বেশি হওয়ায় সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কালোজিরা ধান চাষ।সাতকানিয়া উপজেলা সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এসএম জহির জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় কালোজিরা ধানের চাষ একটু বেশি করেছেন কৃষকরা। তাছাড়া ফলনও হয়েছে বেশি। তিনি আরো জানান, উচ্চ মূল্যের এ ধান চাষে আগ্রহী কৃষকদের সরকারি প্রদত্ত সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
কালোজিরা ধান খুবই ক্ষদ্রাকৃতির এবং সুগন্ধিযুক্ত একটি ধান। কালোজিরা চালের ভাত রান্না করার সময় আশপাশের বহুদূর পর্যন্ত সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া কালোজিরা চালের ভাত সুস্বাদু।
বর্তমানে অধিক ফলনশীল ধানের ব্যাপক চাষাবাদের কারনে কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদারী ঐতিহ্যের এ ধান। সেকালে কালোজিরা ধান চাষ করত এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বর্গাচাষীরা।
এ ধানের চাল দামে সাধারন চালের চেয়ে চারগুন বেশি। দু’মুঠো অন্নের সংগ্রামে যারা দিনভর মাঠে ঘাম ঝড়ায় তাদের পক্ষে কালোজিরা ধানের ভাত খাওয়া দূরহ ব্যাপার।
কৃষকদের ধারণা ছিল কালোজিরা ধান ফলন কম হয়। সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজন মাফিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধানের আশাতীত ফলন হয় । বানিজ্যিকভাবে উৎপাদিত উচ্চ ফলনশীল ধানের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকলেও একেবারে পরাজিত বলা যাবে না। কালোজিরা ধানের এ বছরের ফলন দেখে কৃষকদের পুরাতন ভ্রান্ত ধারণা অনেকটা বদলে গেছে।সরেজমিনে আজ(২৪ নভেম্বর) বিকালে ধানের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের রঙ্গীপাড়া বিলে কালো বর্ণের কালোজিরা ধান সোনালী বর্ণের অন্যন্যা উচ্চ ফলনশীল ধানের খেত থেকে আলাদা করে রেখেছে। যেন নিজস্ব স্বকীয়তায় দন্ডায়মান দক্ষিণ আফ্রিকার নিগ্রো। অপরদিকে উচ্চ মূল্যের এ ধানের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষক কৃষানীর মনও বেজায় খুশি।
উপজেলার সোনাকানিয়ার হাতিয়ারকুল বিলের কালোজিরা চাষী জাহাঙ্গীর আলম,মামুনর রশিদ,শমসুল আলম জানান, ১২ শতক করে জমিতে তারা এ বছর কালোজিরা ধান চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে দারুন। তাদের খেতের ফলন দেখে কবির, আলমসহ অনেকেই কালোজিরা ধান চাষ করবেন বলে জানান।সাতকানিয়া পৌরসভাধীন সামিয়ার পাড়া বিলের চাষী মীর হোসেন জানান, তিনি চলতি আমন মৌসূমে ১৪ শতক জমিতে কালোজিরা ধান চাষ করেছেন। খেতের সমস্ত ধান বিক্রি করতে পারলে সব খরচ পুষিয়ে ২০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় কালোজিরা ধানের বাম্পার ফলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন এবছর সাতকানিয়ায় ২ হেক্টর জমিতে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে।