ঢাকা , সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দখলমুক্ত হলো পূর্বাচলের ১৪৪ একর বনভূমি, ১৫৫টি ঘর উচ্ছেদ রাণীশংকৈলে একই রাতে ৩ ট্রান্সফরমার চুরি ও উদ্ধার। গ্রেপ্তার- ১। এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। অবশেষে জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ নির্বাচনে কাজ করবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই নেই: প্রধান উপদেষ্টা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে বিএনপিকে একমত হওয়ার আহ্বান আখতারের দেবিদ্বারে নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতে আইইউজিআইপি প্রকল্পের ডাস্টবিন বিতরণ নির্বাচনের জন্য দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার, প্রশাসনে হবে রদবদল এনসিপি থেকে নিলা ইসরাফিলের পদত্যাগ

চিকিৎসকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক: প্রধান উপদেষ্টা

সাংবাদিক

গণঅভ্যুত্থানের সময় আহতদের সেবায় যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আপনারা কেবল চিকিৎসক নন, এই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক। আপনারা যেভাবে এই দুঃসময়ে সেবা দিয়েছেন, জাতি তা কোনোদিন ভুলবে না।’

সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত জুলাই স্মরণ আয়োজনে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সেই সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিয়েছেন।

বার্তার শুরুতেই প্রফেসর ইউনূস মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেদিনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই দুর্ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, চিকিৎসা পেশার বিশাল দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ। যখন চারদিকে কান্না আর আতঙ্ক, তখন আপনাদের সেবা আমাদের একমাত্র আশার আলো।’

তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না, তেমনি চলমান আন্দোলনের সময়ও সেই নীতির ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। ‘কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা সেই ব্যতিক্রমই দেখেছি’ বলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার শুধু গুলি চালিয়েই থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ চিকিৎসা না পায়।’

চিকিৎসকদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের সেই সময়কার ভূমিকা কোনও যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসকদের সাহসকেও হার মানায়। যখন রাস্তায় রক্তাক্ত ছাত্রদের হাসপাতালে এনে ফের হামলা চালানো হয়েছে, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি দেওয়া হয়েছে—তখনও আপনারা পিছু হটেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন, কোনো নথিতে রোগীর নাম লেখেননি, কারণ সেসব নথি থেকেই পুলিশ আহতদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করত। অনেকেই নিজের ঘর, এমনকি গ্যারেজে অস্থায়ী ক্লিনিক বানিয়ে গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা করেছেন। দিনরাত বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা দিয়েছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পিছু হটেননি।’

রক্ত সংকটের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, ‘প্রশাসনের নজর এড়িয়ে আপনারাই রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে ভিন্ন রোগ, ভিন্ন নাম ব্যবহার করেছেন। ওষুধ, এমনকি চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও নিজেরাই সংগ্রহ করেছেন।’

শেষে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু একজন পেশাদার চিকিৎসক নন—এই জাতির বিবেক, সাহস আর মানবতার প্রতীক। এই অসামান্য অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৬:৩৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
৫১২ Time View

চিকিৎসকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটের সময় : ০৬:৩৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

গণঅভ্যুত্থানের সময় আহতদের সেবায় যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আপনারা কেবল চিকিৎসক নন, এই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক। আপনারা যেভাবে এই দুঃসময়ে সেবা দিয়েছেন, জাতি তা কোনোদিন ভুলবে না।’

সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত জুলাই স্মরণ আয়োজনে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সেই সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দিয়েছেন।

বার্তার শুরুতেই প্রফেসর ইউনূস মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেদিনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই দুর্ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, চিকিৎসা পেশার বিশাল দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ। যখন চারদিকে কান্না আর আতঙ্ক, তখন আপনাদের সেবা আমাদের একমাত্র আশার আলো।’

তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না, তেমনি চলমান আন্দোলনের সময়ও সেই নীতির ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। ‘কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা সেই ব্যতিক্রমই দেখেছি’ বলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার শুধু গুলি চালিয়েই থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ চিকিৎসা না পায়।’

চিকিৎসকদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের সেই সময়কার ভূমিকা কোনও যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসকদের সাহসকেও হার মানায়। যখন রাস্তায় রক্তাক্ত ছাত্রদের হাসপাতালে এনে ফের হামলা চালানো হয়েছে, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি দেওয়া হয়েছে—তখনও আপনারা পিছু হটেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন, কোনো নথিতে রোগীর নাম লেখেননি, কারণ সেসব নথি থেকেই পুলিশ আহতদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করত। অনেকেই নিজের ঘর, এমনকি গ্যারেজে অস্থায়ী ক্লিনিক বানিয়ে গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসা করেছেন। দিনরাত বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা দিয়েছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পিছু হটেননি।’

রক্ত সংকটের প্রসঙ্গ টেনে ইউনূস বলেন, ‘প্রশাসনের নজর এড়িয়ে আপনারাই রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে ভিন্ন রোগ, ভিন্ন নাম ব্যবহার করেছেন। ওষুধ, এমনকি চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও নিজেরাই সংগ্রহ করেছেন।’

শেষে তিনি বলেন, ‘আপনারা শুধু একজন পেশাদার চিকিৎসক নন—এই জাতির বিবেক, সাহস আর মানবতার প্রতীক। এই অসামান্য অবদান ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’