রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত চুমুক রেস্তোরাঁর চুলা থেকে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সেখানে গ্যাসের উপস্থিতি থাকায় আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকায় মানুষ চেষ্টা করেও বের হতে পারেনি।
বেইলি রোডে গত বৃহস্পতিবারের আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকার রমনা থানায় শনিবার হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার ভবনটির ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলমসহ চারজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, চুমুক রেস্তোরাঁ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে দুই দোকানমালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। আগুন লাগার পর তাদের দোকানের কর্মীরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার (আগুন নেভানোর সরঞ্জাম) ব্যবহার করে নেভানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চুমুক রেস্তোরাঁর চুলা থেকে আগুন লেগেছে। তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত ১০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সংকটকালে ব্যবস্থাপনা) খুবই দুর্বল। কোনো ঘটনা ঘটলে উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে কাজ করা যায় না।’
এদিকে বেইলি রোডের আগুনটির সূত্রপাত ইলেকট্রিক কেতলি ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি আসলে আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে। এজন্য সঠিক তদন্তে কাজ করছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দুপুরে মোবাইল চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
সিআইডি প্রধান বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস যখন সব কাজ শেষ করে, আগুন নেভায়, তখন সিআইডির একাধিক টিম সেখানে কাজ করে। সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিএনএ টিম ও কেমিক্যাল টিম কাজ করেছে। ১৫টির বেশি আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যা জানতে পেরেছি, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাতের সম্ভাবনাই বেশি। কেমিক্যাল আলামতও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে বিস্ফোরক জাতীয় কিছু ছিল কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। প্রতিবেদন পেলেই আগুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় করা মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলের ১৫টির বেশি আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ এনে গত ১ মার্চ রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। এতদিন মামলাটি তদন্ত করছিল থানা পুলিশ। তদন্তের শুরুতেই পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে।