চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, “ নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও জনকল্যাণমূলক গবেষণাই হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ। গবেষণা ক্ষেত্রে চুয়েট নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রেখে যাচ্ছে। সরকারের রূপকল্প-২০৪১ অনুসরণে “স্মার্ট বাংলাদেশ” বিনির্মাণে চুয়েট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চুয়েট ক্যাম্পাসে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের প্রথম শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের শুভ উদ্বোধন করেছেন। আমরা আশা করবো এই ইনকিউবেটরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ প্রজন্ম ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। এই বিশ^বিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে যাঁরা বিভিন্নভাবে ভূমিকা রেখেছেন এবং বর্তমানেও যাঁরা নিরলসভাবে চুয়েটের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, আমি তাঁদের সকলের অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।” তিনি আজ ১লা সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ২০২২ খ্রি. সকাল ১১.০০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে চুয়েটের ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক জনাব আবুল মোমেন বলেন, “আমরা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। পারিবারিক বন্ধনও আলগা হয়ে আসছে। প্রযুক্তি আমাদের বশীভূত করে রেখেছে। আমাদের সামাজিকতা বিঘিœত হচ্ছে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের সামাজিক মননে ও মনোজগতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শুধু ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি সেটাই নয়, একইসাথে আমাদের বৈশি^ক তাপমাত্রা বেড়েছে, প্রকট জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে, খরা, অতিমারি ও বন্যা বেড়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানবজাতি ও সভ্যতা এখন বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভবিষ্যত প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা কেবলই জ্ঞান ও উদ্ভাবনের ভোক্তা হয়ে থাকলে হবে না। আমাদেরকেও নির্মাতার ভূমিকায় আসতে হবে। সেজন্য প্রকৌশলী সমাজ ও বিজ্ঞানীদের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি বিশ^াস করি চুয়েটে সে ধরনের দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ রয়েছে।”
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মইনুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোছাঃ তাহমিনা আক্তার, স্টাফ ওয়েলফেয়াল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন আহাম্মদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি জনাব আমিন মোহাম্মদ মুসা, স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব মো. জামাল উদ্দিন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পিএমই ‘১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আল আমিন ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতার, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব এটিএম শাহজাহান এবং ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সম্পদ ঘোষ। অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়েটের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) জনাব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রধান বক্তা কবি ও সাংবাদিক জনাব আবুল মোমেনকে চুয়েট পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। আলোচনা সভা শেষে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে রক্তদান কর্মসূচি, পরে শিক্ষক বনাম ছাত্র ও কর্মকর্তা বনাম কর্মচারী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ এবং পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
এর আগে সকাল ১০.৪০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন চুয়েটের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এর পরপরই ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে এক আনন্দ র্যালি রেব করা হয়। র্যালিতে রঙ-বেরঙের প্ল্যাকার্ড ও ফ্যাস্টুন সহকারে চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীগণ অংশগ্রহণ করেন। পরে ইএমই ভবনের উত্তর পাশে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের স্মারক বৃক্ষরোপণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে ১৯৬৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই স্বায়ত্ত্বশাসিত ‘বিআইটি, চট্টগ্রাম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চুয়েটে বর্তমানে ১২টি বিভাগে ৯২০টি আসনের (উপজাতি কোটাসহ মোট ৯৩১ আসন) বিপরীতে প্রায় ৬ হাজার ২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। এছাড়া ১০০জন পিএইচডি ডিগ্রীধারীসহ প্রায় ৩৪০ জন শিক্ষক, ১৬০ জন কর্মকর্তা এবং ৪৩৫ জন কর্মচারী নিয়ে একটি পরিবার হিসেবে চুয়েটকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রত নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।