অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপনসহ বিভিন্ন সেবায় ধাপে ধাপে গ্রাহক হয়রানি ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজধানীর বিআরটিএর মিরপুর অফিসে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গ্রাহক সেজে রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুদকের এনফোর্সমেন্টের টিমের অভিযানে হাতে-নাতে বাবু রায় নামে এক দালালকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সঙ্গে থাকা ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই দালালকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুসা জেবিন ও মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়ার সমন্বয়ে একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে।
এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বাংলা৫২নিউজ ডটকমকে বলেন, মিরপুর বিআরটিএ, ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ অফিসে গ্রাহক হয়রানি ও দালালদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে গ্রাহক হিসেবে সেবা নিতে চাইলে দালালদের আনাগোনা দেখতে পায়। এছাড়া একাধিক দালাল তাদের পরিচিত বিআরটিএ সংশ্লিষ্টদের দ্বারা কাজ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এনফোর্সমেন্ট টিম একজন দালালকে হাতেনাতে ধরে এবং পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্র বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। পরবর্তীতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দালালকে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সার্কেল পরিচালক সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহের কর্মকর্তাদের বহিরাগত দালাল প্রবেশের বিষয়ে সতর্ক করেন। দালাল ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে টিমকে আশ্বস্ত করেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। অভিযানকালে সংগৃহীত তথ্যাবলী ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এর আগে দুদকের কাছে বিআরটি অফিসের একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আজকের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আয়ুষ্কাল শেষে অটোরিকশায় সিএনজি প্রতিস্থাপন করতে বিআরটিএতে তিন ধাপে ঘুষ দিতে হয়। প্রথম ধাপে ভাঙতে দিতে হয় কমপক্ষে ৫০ হাজার, এরপর নতুন নিবন্ধন নিতে ২৫ হাজার ও ভাঙা অটোরিকশা ফেরত পেতে ১০ হাজার টাকা। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ বছরে ১২ হাজার ৫০০ অটোরিকশা প্রতিস্থাপন ও মেয়াদ বাড়াতে ১১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে শুধু প্রতিস্থাপন করতেই ঘুষ নেওয়া হয়েছে প্রায় ১০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকনের পক্ষ থেকে দুদকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাজধানীতে ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। এসব গাড়ির ইকোনমি লাইফ (আয়ুষ্কাল) ধরা হয় ১৫ বছর। এরপর অটোরিকশাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে এসব গাড়ি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধাপে ধাপে প্রতিস্থাপন শুরু করে বিআরটিএ। এর জন্য তখন সরকারি ফি ছিল ১২ হাজার ১০০ টাকা। ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব অটোরিকশা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এসব অটোরিকশার মালিকদের নতুন করে আবার নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী-মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ ভুলু ও সদস্য সচিব এটিএম নাজমুল হাসানসহ একটি চক্র প্রতিস্থাপন কাজে জড়িত। তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা দালাল হিসেবে নিয়োজিত। এই দালাল চক্র গাড়ি ভাঙা ও নিবন্ধনের জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে পরিষদের ওই নেতাদের হাতে তুলে দিতেন। তারাই বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অংশ লেনদেন করতেন। ঘুষের এই টাকা বিআরটিএ কর্মকর্তা, মালিক সমিতির নেতা ও দালালদের মধ্যে ভাগ হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।