জবি প্রতিনিধি :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেনকে নিয়ে নিতর্ক যেন থামছেই না। তার স্বেচ্ছাচারী আচরণে অতিষ্ঠ অনেকে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়া- না যাওয়ার বিষয়ে সাবেক উপাচার্য প্রয়াত অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হককে চাপ প্রয়োগ করেন। উপাচার্যের উপস্থিতিতে আবুল হোসেন সমন্বিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে থাকা-না থাকা নিয়ে দ্বিমতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরকে মারধর করে সমালোচিত হন।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পিএইচডি কমিটির এক্সটার্নাল সদস্য হওয়ার অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু সালেহ সেকেন্দার ২৮ এপ্রিল লিখিত আাকরে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর জমা দেন।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। তবে অভিযোগটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন দাবি করে উপচার্য বরাবর আবুসালেহ সেকেন্দারের নামে পাল্টা সম্মানহানির অভিযোগ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেনের।
জবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবু সালেহ সেকেন্দার অভিযোগে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমতে পিএইচডির এক্সপার্ট বাইরে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হবে। এই এক্সপার্টিজ নিয়োগ একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে হতে হবে। তবে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক হয়েও ড. আবুল হোসেন তথ্য গোপন করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পিএইচডি কমিটির এক্সটার্নাল মেম্বার হয়েছেন। এই নিয়োগ একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে হয়নি। তিনি নিজেকে গুগল স্কলারে যেসব বিষয়ের এক্সপার্ট দাবি করেছেন তার সঙ্গে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ন্যূনতম কোনো সম্পর্কও নেই।
আবু সালেহ সেকেন্দার তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, কারোর যদি এক্সপার্টিজ না থাকে তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে তিনি ওই বিষয়ে কোনো প্রস্তাব পেলে তা ডিনাই করবেন। যদি না করেন তাহলে তিনি তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এই জাল-জালিয়াতি তথ্য-গোপন স্পষ্টত কর্তব্যে অবহেলা, নৈতিক স্খলন ও অদক্ষতার ধারায় পড়বে। সেক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে চাকরি থেকে অপসারণ করা। এই নিয়োগ একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, এমন স্পর্শকাতর অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা তুলে আনা দরকার। এর সত্যতা কতটুকু সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে জানা দরকার সব মহলের। তবে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন পিএইচডি কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি কাগজে কলমে এমন কোনো কমিটির সদস্য নন বলে জানান।
আবুল হোসেনের গণমাধ্যমে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের পিএইচডি সেমিনারে উপস্থিত থাকার স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আবুসালেহ সেকেন্দারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হয়। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, জামলাপুরের স্বশিক্ষিক আব্দুল মোতালেবের সন্তান আবুল হোসেন ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ সম্পন্ন করে কর্মজীবন শুরু করেন ইসলামী ব্যাংকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের এক্সটেনশনে। সেসময়ে তার সহপাঠী অনেকেই তার ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইসলামি ব্যাংকে তখনকার সময়ে চাকরির গোপন শর্ত ছিলো ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার বিষয়টি। যদিও এখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলদলের একাংশের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এটি নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে বিতর্ক।
এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২২ এর আগে ইশতেহার ঘোষণার সময় ‘নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদ না নেওয়ার’ অঙ্গীকার করেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব নিয়ে সমালোচিত হন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন। একই সাথে তখন শিক্ষকদের স্বার্থ বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ পদ না নেওয়ার কথা বলা হলেও ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ৯ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে সমালোচনার মুখে পড়েন এই অধ্যাপক।
এছাড়া আবুল হোসেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানের আমন্ত্রণে যাওয়ার দাবি করেছেন। সেই জবি শিক্ষক আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ করে তার রুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি না টানানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সহকর্মীর রুম দখল করে টাকা পয়সাসহ জিনিসপত্র লুটপাটের অভিযোগ, আর্থিক কেলেংকারী, প্রতিটি স্বাক্ষরের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে চারশত টাকা নেওয়া, নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনের আর্দশে উজ্জীবিত হয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে বিশেষ মহিলা কক্ষ প্রতিষ্ঠা, অর্থের বিনিময়ে পিএইচডি ও ইভিনিং কোর্সের ডিগ্রি প্রদানসহ আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন অভিযোগ রয়েছে।