১৭ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩ রান, হাতে ৩ উইকেট। সেই ম্যাচ রংপুর যখন ১ উইকেটে জিতল তখন বল বাকি আর তিনটি। এমনই থ্রিলার উপহার দিয়ে তামিমের বরিশালের বিপক্ষে বদলা নিল সাকিবের রংপুর। আসরে দ্বিতীয়বারের দেখায় বরিশালের দেওয়া ১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে রংপুর জিতেছে ১ উইকেটে। প্রথম দেখায় বরিশাল ৫ উইকেটে হারিয়েছিল রংপুরকে।
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল মুখোমুখি সাগরিকায়। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে নানান শব্দ, সব যে খুব ভদ্রগোছের সে রকমটা নয়। সাকিবের বলে মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ দিয়ে তামিম আউট হতেই একটা জোরাল উল্লাস হলো গ্যালারির একাংশে, একটা অংশ নীরব। বিপিএলের এবারের আসরের অন্যতম হাই ভোল্টেজ ম্যাচে শেষে হাসি সাকিবের। আবু হায়দার রনির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রংপুর রাইডার্সকে জিতিয়েছে ১ উইকেটে। ১২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে রনি ধসিয়ে দিয়েছেন বরিশালের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড, বাকি কাজটা করেছেন মূলত রংপুরের বিদেশি ব্যাটসম্যানরা। তবে শেষ দিকে ব্যাট হাতে কাজটা সারতে হয়েছে হাসান মাহমুদকে।
টস জিতে তামিম নিলেন ব্যাটিং। টম ব্যান্টনকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই নামলেন ব্যাট করতে এবং প্রথম ৪ ওভারে দুজনে মিলে ৩৮ রানও তুলে ফেললেন। ম্যাচের পঞ্চম ওভার করতে এলেন সাকিব, স্ট্রাইকে তামিম। সাকিবের প্রথম বলেই চালিয়ে খেলার মানসিক প্রস্তুতি বোধহয় নিয়ে রেখেছিলেন তামিম, লেন্থ বিচার করতে একটু ভুল হয়ে গেল। এগিয়ে আসার চিন্তা করেও গেলেন ব্যাকফুটে, ব্যাটে বলে এক হলো না ভালোমতো। আকাশে তুলে দিলেন বল আর সেটা লুফলেন মুমিনুল হক। সাকিবের প্রথম বলেই তামিম আউট, বরিশালের প্রথম উইকেটের পতন। সেই জায়গা থেকে ব্যান্টন আর কাইল মায়ার্স মিলে ভালোই বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন বরিশালকে। ২৬ রান করে ব্যান্টন ফিরে গেলেও মায়ার্স ৩ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে রান তুলছিলেন দ্রুত গতিতে। তাকে আটকালেন আবু হায়দার রনি, দারুণ এক রিটার্ন ক্যাচে। তার আগে রনির বলে উইকেট দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৫) ও সৌম্য সরকার (০)।
১ উইকেটে ১১০ রান থেকে ৫ উইকেটে ১১৬ রান হয়ে যাওয়ার ধাক্কাটা আর সামলে উঠতে পারেনি বরিশাল, উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। পারেননি মাহমুদউল্লাহ (৯) ও মেহেদী হাসান মিরাজও (৩)। রনির ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি হাসান মাহমুদের জোড়া শিকার ৯ উইকেটে ১৫১ রানে আটকে দেয় ফরচুন বরিশালকে। আমির জামাল আর ইমরান তাহিরের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে এই বিপিএলে ৫ উইকেট পেলেন রনি, বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে প্রথম।
১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার মুমিনুল হক কোনো রান না করেই বিদায় নিলেও ব্রেন্ডন কিং (২২ বলে ৪৫) এবং সাকিব (১৫ বলে ২৯) ক্ষতিটা ভালোই পুষিয়ে দিয়েছিলেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট গেলেও রান উঠে গেল ৭৪। বরিশালের ইনিংসের মতোই রংপুরের ইনিংসের মধ্যে নামল ধস। দলীয় ৮২ থেকে ৮৭ রানে পৌঁছতে নেই সাকিব, নুরুল হাসান সোহান আর শেখ মেহেদি হাসান। বেশিক্ষণ টিকলেন না টম মুরসও। জিমি নিশাম আর মুরস মিলে ইনিংস মেরামতের কাজটা করছিলেন, মুরসকে আউট করে নিশামকে অল্পতেই আউট করার সুযোগ পেয়েছিল বরিশাল। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে নিশামের ক্যাচ ফেলে দেন প্রিতম কুমার। নিশাম শেষ পর্যন্ত ওবেদ ম্যাকয়ের বলে আউট হয়েছেন মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে আর প্রিতম কুমার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের ক্যাচ নিয়ে প্রোটিয়া অলরাউন্ডারকে আউট করেছেন ১৩ রানে।
রানটা খুব বেশি না হওয়ায় আর পাওয়ার প্লেতেই প্রায় অর্ধেক রান তুলে রানরেটের চাপটা কমিয়ে আনায় উইকেট পড়লেও খুব একটা চাপে পড়েনি রংপুর। তবে ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রনি উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলে বরিশাল ফেরে ম্যাচে। জয়ের জন্য রংপুরের দরকার ১০ বলে ২ রান, বরিশালের ১ উইকেট। মায়ার্সের ওভারের বাকি ৪টা বল রক্ষণাত্মকভাবে খেলে কাটিয়ে দেন হাসান মাহমুদ। সাইফউদ্দিনের করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলেও শামীম ফের সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে পাঠান হাসান মাহমুদকে। তার ব্যাটের কানায় লাগা শটে চার হয়েই ১ উইকেটে জিতেছে রংপুর।
হারের পর তামিম বললেন, ‘আমরা ১৯০-২০০ রান করার মতো জায়গায় ছিলাম, আমরা সঠিক শট নির্বাচন করিনি। তবে যেভাবে আমরা ফিরে এসেছি ম্যাচে, যেভাবে জয়ের খুব কাছে গিয়েছি সেজন্য খুবই খুশি। এই ম্যাচটা হারলেও আমি সবাইকে কৃতিত্ব দেব।’ ১১ ম্যাচে ৯ জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে রংপুর, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে কুমিল্লা আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে তিনেই থাকল বরিশাল।