যশোরের ঝিকরগাছায় অন্যের জমির ভেতরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাধা দিলে অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষক আবদুল হক ও তার ছেলে তরিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরের দিকে ঝিকরগাছা থানার সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। প্রতিবেশী আজগর গাজীর ছেলে মোমিনুর রহমানসহ আরও কয়েকজন এ হামলা করেন। আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছায় থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামী মমিনুর রহমান স্থানীয় মদনপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। তিনি ও তার ভাই আমিনুর রহমান স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে সরকার পরিবর্তনের পর তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের মিশতে শুরু করেন। এছাড়া হামলায় জড়িত রুহুল আমিনের ছেলে বাপ্পী ও মুল্লুকের ছেলে সৈকত স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। অন্যদিকে, মারধরের শিকার শিক্ষক আবদুল হকের ছেলে তরিকুল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। নিজ বাড়িতে মুরগির খামার রয়েছে তার।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার মোমিনুররের পরিবার শিক্ষক আব্দুল হকের জমির সীমানার ভেতরে ঢুকিয়ে পাকা প্রাচীর নির্মাণ করলে প্রতিবাদ করেন শিক্ষকের ছেলে তরিকুল। এতে মোমিনুর ক্ষিপ্ত হয়ে তরিকুলের ওপর হামলা করেন। তখন ছেলেকে বাঁচাতে গেলে শিক্ষক আব্দুল হককেও মারধর করে জখম করেন মোমিনুর ও তার বাবা আজগর গাজী।
আহত শিক্ষক আবদুল হক বলেন, শনিবারের ঘটনার পর তারা রাস্তায় বের হলে মারধর করা হবে এমন হুমকি দেয় মোমিনুর। এমনকি তরিকুলের মুরগির খামার পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। গত কয়েকদিন আতঙ্কের কারণে তারা বাসা থেকে বের হতে পারেননি। এর মধ্যে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সোমবার দুপুরের দিকে ঝিকরগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ (সাধারণ ডায়েরি-জিডি) করেন শিক্ষক আব্দুল হক। তারা জিডি করে থানা থেকে বের হওয়ার পরপরই মোমিনুর, তার ভাই আমিনুর, বাপ্পী ও সৈকত তাদের ওপর হামলা করে মারধর করেন। আবদুল হকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হন। তখন স্থানীয় জনতা ও পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই চারজনকে আসামি করে ঝিকরগাছায় থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকের ছেলে তরিকুল। বর্তমানে তারা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হামলায় জড়িত মোমিনুর শিক্ষকতা করলেও এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টে ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের একটি গোষ্ঠী তাকে আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা আরও বলেন, শিক্ষককে হামলার পরে পুলিশ কয়েকজন আটক করে থানায় নিয়ে গেলে স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা তাদেরকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। তবে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে নয়, বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রদল-যুবদলের একাধিক নেতা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মমিনুর রহমানকে সোমবার সন্ধ্যায় কল করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক কোন কথা বলতে রাজী হননি। তিনি বলেন, আমি বর্তমানে ছাত্রদলের লোকদের সঙ্গে মিটিং করছি। রাত ১০টার দিকে আপনার সঙ্গে কথা বলবো।
ঝিকরগাছা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আশরাফুল আলম রানা বলেন, পৌর যুবদলের সভাপতি আরাফাত কোমলের ফোন পেয়ে থানায় যাই। তখন একজন তাদের ছবি তুলতে গেলে আমি রেগে গিয়ে ছবি ডিলেট করতে বলি। কারও পক্ষে নয়, দুজনেই এলাকার লোক তাই মীমাংসার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম।
ঝিকরগাছা পৌর যুবদলের সভাপতি আরাফাত কোমল বলেন, মোমিনুর ছাত্রদল বা যুবদলের রাজনীতি করেন না। তবে তারা দুই পরিবার বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করবেন এমনটা শুনেছেন। চাইলে মামলাও করতে পারেন।
পৌর যুবদলের সদস্য সচিব জনি বলেন, মোমিনুরকে সহযোগিতা করার অভিযোগ সত্য নয়। তারা আগে ঝামেলা করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করতে স্থানীয়রা চেষ্টা করছেন এমনটা শুনেছি।
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহিম আলী বলেন, শিক্ষক আবদুল হক থানায় জিডি করে বের হওয়ার সময় রাস্তায় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তার ছেলে তরিকুল বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ আসামীদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে।