মাঝ চৈত্র পেরুলেও প্রকৃতিতে তাপদগ্ধ নিদাঘের রুদ্ররূপ প্রকট হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে দেশের ষড়্ঋতুর চক্র এলোমেলো করে দিচ্ছে। কাঠফাটা তাতানো রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হওয়ার বদলে এখন মেঘলা আবহাওয়া, বৃষ্টিবাদল, সকালে কুয়াশা, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। শীতার্ত আমেজ ঘিরে আছে এখনো। এবছর আবহাওয়ার খেয়ালি আচরণে চৈত্র যেন পেয়েছে নতুন রূপ। সারা দেশে তাপমাত্রা ১৫ থেকে ৩২-এর মধ্যে ওঠানামা করছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বিরূপ আবহাওয়ার কবলে পড়েছে দেশ। গত কিছু দিন যাবত্ রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা কমছে। রাতের শেষ দিকে গায়ে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা। আবার ভোর পেরিয়ে সকাল হতেই বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। দুপুরের দিকে তাপমাত্রা বেশ উষ্ণ থাকছে, আবার বিকাল থেকে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাচ্ছে। রাজধানীর বাইরের পঞ্চগড়ে বর্তমানে ১৪ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। অর্থাত্ এখনো সেখানে শীতকালীন আবহাওয়া বিরাজ করছে। যদিও ঐ এলাকায় এখন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই পরিস্থিতির মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরো দুই দিন ঝড়-বৃষ্টি চলার পর গরম বাড়বে। আজ শনিবার রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। আর কাল রবিবার থেকে বাড়তে পারে দিন ও রাতের দুই সময়েই তাপমাত্রা। রবিবার থেকে তাপমাত্রা বেড়ে দেশের দুই-এক জায়গায় দাবদাহ হতে পারে। তবে এখনই তীব্র তাপের অসহনীয় অবস্থা হবে না।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, চৈত্র মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। প্রতি বছরই সবসময় এটাই দেখা যায়। এখন সেই অবস্থার বদল দেখা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বেশ কম। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে। এপ্রিল মাসের ৫ থেকে ৭ তারিখের দিকে দাবদাহ বাড়বে।
আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল মান্নান বলেন, প্রতি বছরই সারা পৃথিবীতে বিরূপ আবহাওয়া আসে। সাম্প্রতিককালে বিরূপ আবহাওয়াটা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারির পরে মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকার কথা এবং সর্বোচ্চ হওয়ার কথা। সেই নিয়ম মেনেই শুরু হয়েছিল তাপমাত্রার বৃদ্ধি। কিন্তু মাঝে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মতো ঘটনা ঘটায় এটি কমে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে উত্তরপশ্চিম দিকের বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে ভোর রাতে ঠান্ডার অনুভূূতি এবং দিনের বেলায় তাপমাত্রা কম অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু দুই-এক দিন পরেই গরম চলে আসবে। এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে জানান, এ সপ্তাহে দেশব্যাপী মৃদু তাপ-প্রবাহের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব এখন বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে দেশে। তাপপ্রবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্ষা আসার সময় পালটেছে। বিলম্ব হচ্ছে চলে যেতেও। শুধু বর্ষা নয়, শীত বা গ্রীষ্মেও বেড়ে যাচ্ছে তাপ। মেঘাচ্ছন্ন দিনের পরিমাণ বাড়ছে। তাতে শীতের দিন তাপ বাড়লেও শীতের তীব্রতার অনুভূতি হচ্ছে বেশি মাত্রায়। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—তাপপ্রবাহের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। সারা দেশেই এটি বাড়ছে। শীতেও স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ শনিবার রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এছাড়া আগামীকাল রবিবার ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।