জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভেতরে যে মানবিকতা, মানুষের প্রতি দরদ ছিল তা শিশুকালেই জানা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা শিশুদের ভালবাসতেন, তাদের প্রতি অত্যন্ত দরদ ছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও খুব পছন্দ করতেন। কাজেই তার জন্মদিনকে আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি।’
‘আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারাও যেন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছাসহ তিন ভাই এবং আত্মীয় পরিজন ১৮ জনের শাহাদাতের কথা স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া।
১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টুংগীপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতেই তিনি জন্ম নিয়েছেন এই মাটিতে তিনি বড় হয়েছেন আর এই মাটিতেই তিনি শায়িত আছেন।’
বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনটাকে বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর ভেতরে যে মানবিকতা মানুষের প্রতি দরদ শিশুকালেই জানা গেছে। যখন তিনি স্কুলে পড়তেন, দরিদ্র কোনো ছেলে বই নেই, নিজের বই দিয়ে দিতেন, নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত তিনি মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তার ভেতরে সেই মানবিকতা ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা-দাদি লক্ষ্য করেছেন।’
‘এবং বড় হয়ে তিনি এদেশের মানুষ, যারা শোষিত বঞ্চিত ছিল, একবেলা খাবার পেত না, যাদের কোনো পুষ্টি ছিল না, রোগে চিকিৎসা পেত না, ঘরবাড়ি ছিল না, সেইসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার লক্ষ্যেই তিনি সংগ্রাম করেছেন’-যোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি। সেই ৪৮ সাল থেকেই এর জন্য আন্দোলন তিনিই শুরু করেছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়। কাজেই জাতির পিতার এই জন্মদিনকে আমরা শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি।’
‘জাতির পিতা যখন আমাদের স্বাধীনতা এনে দেন, মাত্র ৯ মাসের মধ্যে তিনি একটি সংবিধান করে দিয়েছিলেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সংবিধানে কিন্তু শিশু অধিকারের কথা বলা আছে।’
‘বঙ্গবন্ধুই প্রথম এদেশে প্রায় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন। শিশুদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। জাতীয় শিশু আইন ১৯৭৪ তিনিই প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তিনি ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করে সেই শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করে দেন মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেন’-উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতা এসেছে শিশুদের কথা বিবেচনা করে শিশুদের দিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করি। পরবর্তীতে যখন আবার আমরা সরকারে আসি আমরা এই দেশে শিশুদের জন্য জাতীয় শিশু নীতি ২০১০, সুরক্ষা আইন ২০১০, জাতীয় শিশু নীতি ২০১১, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশু খাদ্য বাণিজ্যিকভাবে বিপণন, প্রস্তুতকৃত শিশু খাদ্য ও এর ব্যবহারের জন্য সরঞ্জামাদি বিপণন ও নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১ প্রণয়ন করেছি।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সুরক্ষা আইন ২০১৩, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩ থেকে ২০২৫, বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৭, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আইন ২০১৮, জাতীয় নারী নির্যাতন আইন ২০২০ প্রণয়ন করে নারী ও শিশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার পরামর্শ অনুসরণ করেই ২৬ হাজার ১৯৩টি সরকারি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমরা সরকারিকরণ করে দিয়েছে। আমরা শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষার্থী ১ কোটি ২০ লাখ শিশুকে আমরা উপবৃত্তি দিচ্ছি, সরাসরি মায়ের নামে সেই টাকা যাচ্ছে, আর সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী আমাদের থেকে বৃত্তি, উপবৃত্তি পাচ্ছে, গবেষণার জন্য অর্থ পাচ্ছে।’
কম্পিউটার শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দরকার স্মার্ট জনগোষ্ঠী। শিশুকাল থেকে যেন তারা সেটা শিখে সে ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।’
শিশুদের উদেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করে চলতে হবে।’
যারা প্রতিবন্ধী, অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার উপদেশ দিয়ে শিশুদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্ধকে অন্ধ বলিও না আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না। এটাতো ছোটবেলার শিক্ষা। এজন্য কাজের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। আমরা প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিয়েই প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে বৃত্তিও দিয়ে থাকি।’