৭ ই জুলাই, ২০২৪, রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৬৭ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ইউএন ডিজএ্যাবিলিটি রাইটস্ চ্যাম্পিয়ন ও প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও উন্নয়নের প্রবর্তক আবদুস সাত্তার দুলাল।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক ও পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ।
সেমিনারে গেস্ট অব অনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মিসেস আনাতুন নুর।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা পারভীন আক্তার ও নাঈমা ফেরদৌস ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর আব্দুলাহ আল মাহমুদ।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু, শাকিব হোসেন ও সাদিয়া হালিমা।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা ক্রীড়ামোদী মানুষ ছিলেন।
অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুর রহমান জাতির পিতাকে নিয়ে তার নিজ জীবনের স্মৃতি চারণ করে বলেন, আলজিয়ার্সে একবার তিনি গভীর রাতে কাজের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিলেন। আলজিয়ার্সের সেই ড্রাইভারের নাম ছিল আলী আবদার। যাত্রাপথে ড্রাইভার এর সাথে কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি বললেন আমি বাংলাদেশী।
সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার তার চলতি গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল, গাড়ি থেকে নামেন।
I hate Bangladeshi people. Bengali people killed Bangabandhu Sheikh Mujibur. I hate Bengalis.
তখন আমি আমার কাছে একটা১০ টাকার নোট ছিল যেটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সহ।
সেটা দেখিয়ে বললাম এটা আমার আইডেন্টিটি।এরপর আমি আলীকে বুঝিয়ে বললাম, কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল এর পিছনে কার হাত ছিল।
আলীকে আমি প্রশ্ন করলাম তুমি কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে চিনো।
আলী তখন বলল, বঙ্গবন্ধু আলজিয়াসে এসেছিলেন একবার আমি তার গাড়ির ড্রাইভার হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন আমি শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহার , মানবিকতা, ব্যক্তিত্ব, ও আদর্শে দেখে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যাই। আমি অন্য কোন দেশের নেতার মধ্যে এমন গুণবলি দেখতে পাইনি এবং আমি তার একজন ভক্ত হয়ে যাই।
একবার দেখায় বিদেশি একজন নাগরিক বঙ্গবন্ধুর প্রতি এতটাই সম্মান দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই। কতটা আদর সমান ব্যক্তি হলে একবার দেখায় মানুষ তার পতি এতটা সম্মান দেখাতে পারে।
বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ এই কারণে যে বঙ্গবন্ধুর কিছু সেক্রেট ডকুমেন্ট তার মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার আদর্শে আদর্শবান করার সুযোগ পেয়েছি।
সেমিনারের প্রধান অতিথি আব্দুল সাত্তার দুলাল বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মহানায়ক , রোল মডেল অব দ্যা লিডারশিপ। একজন নেতার কেমন হতে হয় তার উদাহরণ আমাদের কাছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লিডারশিপের যে বৈশিষ্ট্য আছে তা অতুলনীয়।
তিনি সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি পি এইচ ডি গবেষক বাবু রণজিৎ মল্লিক বলেন, বিভিন্ন দার্শনিকের ভাষায় ইতিহাস বর্তমানকে নির্মাণ করে।ভবিষ্যতের দিকে দিকনির্দেশনা দেয়। বাঙালি ইতিহাসের রাষ্ট্র সমাজ ও মানুষের মধ্যে যে সম্মিলিত মানবিকতার তৈরি করেন সে হলো বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে বলা হয়, He is the physical embodiment of the independence of Bangladesh. বঙ্গবন্ধু একজন হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে সকল জাতি সত্তার ঐক্যে পরিণত হয়েছে। সকল বিরোধী উপাদান গুলো একক স্রোতে উপলব্ধি হয়েছে।বঙ্গবন্ধু আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন ঐক্য ব্যতীত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি সম্ভব নয়। বাঙালির সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি ছিল মুক্তিযুদ্ধ সেটা সম্পূর্ণ করেছেন সকল জাতির ঐক্যের মাধ্যমে।
এই বিষয়টির মাধ্যমে বোঝা যায় যে আমরা বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধারণ করতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা আবশ্যক।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি পি এইচ ডি গবেষক অধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কথা আমরা বলি তার রাজনীতি আমরা করি। তার স্বরচিত বই আমাদের সবার পড়া উচিত। ভবিষ্যত প্রজন্মের সাথে বঙ্গবন্ধু নিয়ে আলোচনা করলে তবেই আমরা এগিয়ে যাব সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর স্বরচিত তিনটি বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ,আমার দেখা নয় চীন এবং কারাগারের রোজনামচা পড়ার আহ্ববান জানান।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করলে সমাজে অনিয়ম শূন্যের কোঠায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেমিনারের গেস্ট অব অনার আমাতুন নূর বলেন ,আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি আমি আমার বাবাকে দেখেছি। আমার বাবা “বাঘা মালেক” নামে পরিচিত ছিল।তিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান আমার বাবাকে পাগলা বলতেন। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ দেখেছেন তার জীবন যাপন দেখেছেন। তাই হয়তো আমরা তার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছায়া দেখতে পেয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের আলোকিত করতে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আলোচনা প্রতিনিয়ত করা উচিত।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা নাঈমা ফেরদৌস বলেন, ১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির একটি কালো অধ্যায়। ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে আমরা হারিয়েছি একজন মহান ও স্বাধীনচেতা সাম্যের নেতাকে।
জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার সাদিয়া হালিমা বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জানিপপ এর আরেক ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার জনাব শাকিব হোসেন বলেন , ৭ জুলাই ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে, ঔপনিবেশিক প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগ ও পরামর্শে সংসদে উত্থাপন করা হয়েছিল জেলা গভর্নর নিয়োগ সম্পর্কিত বিল ।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।