১৬ ই জুলাই, ২০২৪, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৭৬ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা নাঈমা ফেরদৌস।
সেমিনারের মুখ্য আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা মিসেস হাসিনা বেগম ও পারভীন আক্তার।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু ও শিক্ষক নেত্রী মিসেস সংগীতা বিশ্বাস।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কলিমউল্লাহ বলেন,
জাতির পিতা ছিলেন বাংলার ভূমিপুত্র।
সেমিনারের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মাসুদুল হক চৌধুরী বলেন,
আগামীকাল ১০ ই মহররম । মুসলিম বিশ্বের এক শোকাবহ বেদনাদায়ক দিন।১৯৭১ সালে দশ ই মহুররম ছিল ৮ ই মার্চ , ৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষন প্রচার না করায় ঢাকা রেডিও বেতার কর্মীগন সম্প্রচার বন্ধ করে দেন। ৮ ই মার্চ সামরিক শাসকগণ ভাষন প্রচার করার শর্ত মেনে নিলে পূনরায় সম্প্রচার শুরু হয়। সকাল ৮- ৩০ মি বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের ভাষনটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জনগণ ভাষনের নির্দেশ মেনে জনগণ প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর অবরুদ্ধ বাংলাদেশে সে দিন ও তাজিয়া মিছিল বের হয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এর একাত্তরের দিন গুলি গ্রন্থে তার বরণনা আছে। বাঙ্গালী কি সেদিন কি ভেবেছিল ৭৫এর ১৫ই আগষ্ট আরেক কারবালা অপেক্ষা করছে।
১৯৭৫ এর বিয়োগান্তক ঘটনার পর মৃতের আত্মহত্যা রুপক গল্পের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করেণ শিক্ষাবিদ ও কথা সাইত্যিক পন্ডিত আবুল ফজল। ১৯৭৬ সালে সাহিত্য পত্রিকা সমকালে তা প্রাকধিত হয়। সরকার এর সব কপি বাজেয়াফত করলেও কিছু কপি তার আগে ই বাজারে চলে যায়। পন্ডিত আবুল ফজল জিয়া উর রহমানের অনুরোধে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করার শর্তে তার উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেন জিয়া কথা না রাখায় ১৫ আগষ্টের বেদনাবিধুর কাহিনী নিয়ে তিনি এই গল্প লিখেন এবং পরে পদত্যগ করেন।
১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট বাঙ্গালীর ইতিহাসে যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড কারবালা হত্যাকাণ্ডের মত হৃদয় বিদারক । ইয়াজিদ মনে করেছিল ইমাম হোসেন ও তার বংশধরকে বাঁচিয়ে রাখলে তার পক্ষে খেলাফত চালানো সম্ভব হবে না তাই ইয়াজিদ শিমার বাহিনী সেদিন ইমাম হোসেন সহ কারবালায় অবস্থানকারী শিশু আসগর সহ নারী শিশু সকলকে হত্যা করে। তেমনি নব্য ইয়াজিদ মোশতাক নব্য শিমার ফারুক, ডালিম, রশিদ , নূর বাহিনী ও ভেবেছে বঙ্গবন্ধু ও তার বংশধরদের বাঁচিয়ে রেখে বাংলাদেশের ক্ষমতা নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ১৫ ই আগষ্ট তাই খুনী চক্র শিশু রাসেল সহ ৩২ নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী সকলকে হত্যা করে৷ তারা সেদিন শেখ হাসিনা পাশের যে বাড়তে থাকতেন সে বাড়িতেও গুলি চালায়। দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে তিনি ও তার ছোট বোন রেহানা বেঁচে যান। আজ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের প্রথম উত্তরসুরী হিসাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের অন্যতম মানবিক ও ক্ষমতাবান রাজনীতিক। তিনি বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সমৃদ্ধির পথে। বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ রেহানার কণ্যা বঙ্গবন্ধুর নাত্নী টিউলিপ সিদ্দিক আজ আপন রাজনৈতিক যোগ্যতায় ক্ষমতাধর ব্রিটিশ মন্ত্রী সবার অন্যতম মন্ত্রী ।
বঙ্গবন্ধু হত্যামালার বাদী মুহিতুল ইসলাম ১৫ আগষ্টের হৃদয় বিদারক ঘটনার আদালতে যে বর্ণনা দিয়েছেন কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তার “দেয়াল ” উপন্যাসে সে বর্ণনা সংযোজন করেছেন যা পড়লে চোখ অশ্রু সিক্ত হয় হৃদয়ে বিষাদ সিন্দুর কান্না আসে।
কারবালার নি:শংস ঘটনার বিচের হয় নি কারণ ইমাম হোসেনের বংশধর কেউ বেঁচে ছিল না । কিন্তু আমাদের শেখের বেটি বেঁচে থেকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসে ১৫ ই আগষ্টের খুনীদের বিচার করে ইতিহাসে নব অধ্যায়ের সসংযোজন করেছেন।
আজ কারবালার শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
সত্যের সংগ্রামে শাহাদাত বরণকারী হজরত ইমাম হোসেনে কিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইতিহাসে প্রজন্মের আদর্শ হিসাবে বেঁচে আছেন আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে। ইয়াজিদ শিমার মোস্তাক ফারুক রশিদ ডালিম নিক্ষিপ্ত ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি মিসেস নাঈমা ফেরদৌস বলেন, আমাদের আলোচ্য বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনে শুরু করেন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালযয়ে। তার পর গোপালগঞ্জ মাথুরা নাথ মিশনারী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে উচ্চমাধ্যিকে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ইসলামিয়া কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে সেই বেকার হোস্টেলের ২৩ এবং ২৪ নম্বর কক্ষকে বর্তমানে মিউজিয়াম হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে ই তিনি বিএ পাস করার পর একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।
সেমিনারের মুখ্য আলোচক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সদস্য পিএইচডি গবেষক জনাব রণজিৎ মল্লিক বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তীব্র একটি মতাদর্শিক বিরোধিতাকে নস্যাৎ করে স্বাধীন -স্বার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিলেন। সেদিনের সেই মতাদর্শিক যুদ্ধের একদিকে ছিল ভারত ও রাশিয়া সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল স্বপক্ষ শক্তি, আর অন্যদিকে ছিল আমেরিকা পাকিস্তান সহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বিরুদ্ধ শক্তি। শেখ মুজিব তার মানবিক ঔদার্যবোধে দ্বন্দ্ব সংঘাত না চাইলেও বিরুদ্ধ শক্তি বাংলাদেশকে ব্যর্থ করবার প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করবার ভেতর দিয়ে মূলত বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিকে হত্যার ভেতর দিয়ে মানুষের মুক্তিকামী মতাদর্শকে কখনো মুছে দেয়া যায় না। যে শক্তি সমূহ শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে তারা পুজিবাদী-মৌলবাবী বলে পরিচিত। তিনি বলেন, সেই মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব স্বাধীনতার পরেও চলমান রয়েছে।
রণজিৎ মল্লিক আরো বলেন, এই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র বিকল্প তারই সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। একমাত্র তিনিই পারেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মতাদর্শকে বাস্তবায়ন করতে এবং তিনি সেই যুদ্ধটিই মূলতঃ করে যাচ্ছেন।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিহজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।