১০ ই জুলাই, ২০২৪, বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ বিষয়ক সেমিনারের ৯৭০ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জানিপপ কর্তৃক আয়োজিত জুম ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জানিপপ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচ ডি গবেষক ও বি সি এস এডুকেশন ক্যাডার এর সদস্য বাবু রণজিৎ মল্লিক।
সেমিনারে গেস্ট অব অনার হিসেবে যুক্ত ছিলেন ইউএন ডিজএ্যাবিলিটি রাইটস্ চ্যাম্পিয়ন ও প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও উন্নয়নের প্রবর্তক আবদুস সাত্তার দুলাল।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা পারভীন আক্তার ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর আব্দুলাহ আল মাহমুদ।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন জানিপপ এর ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার শারমিন সুলতানা শিমু ও শাকিব হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. কলিমউল্লাহ বলেন, জাতির পিতা বহু বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন দেশের কথা চিন্তা করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে একটি গোষ্টী এখনো যে অহ রহ মিথাচার করে যাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে বলতে চাই ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ ঐতিহাসিক পল্টন মায়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যে ঐতিহাসিক সমাবেশ হয় সেখানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ততকালীন ডাকসুর জি এস শাহজাহান সিরাজ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতার একটি ইশতেহার পাঠ করেন। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে জাতির পিতা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সর্বাধীনায়ক আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি রবীন্দ্রনাথের গান টি কে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে উল্লেখ করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতেই স্বাধীন বাংলার সোনালী মানচিত্র খচিত লাল সবুজ পতাকাকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র ব্রিগেড আনুষ্ঠানিক গান স্যেলুট করেন।
২০০৬ সালে শাহজাহান সিরাজ যখন বি এন পি সরকারের মন্ত্রী বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন যে আমি যখন বঙ্গবন্ধু কে স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলি তখন বঙ্গবন্ধু বলেন সিরাজ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার আগে আমাদের তিনটি জিনিস দরকার ১। জন সমর্থন , ২। বিদেশী রাষ্ট্রের সমর্থন ৩। যুদ্ধের অস্ত্রের জোগাড় । আমাদের একটি আছে আর দু টি র ব্যাবস্থা করা পয্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, আর তা ছাড়া পাকিস্তানির আক্রমণ করার আগে আমরা ঘোষণা করলে পাকিস্তানীরা একে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসাবে বিশ্বকে বুঝাবার প্রয়াস পাবে। তাই বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন আর অস্ত্রের ব্যাবস্থা পয্যন্ত অপেক্ষা কর। আমি সময় মত ই সিদ্ধান্ত নিব।
১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল পূর্ব বাংলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি গণের অধিকাংশ একত্রিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজ উদ্দিন আহমেদ কে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ঘোষনা করেন।
পরবর্তীতে কুষ্টিয়ায়ার বৈদ্যনাথ তলাকে মুজিব নগর নামকরণ করে দেশি বিদেশি সাংবাদিক ও মিডিয়ার সামনে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করেন। বাঙ্গালীর নিজস্ব দেশ নিজস্ব সরকারের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
মুজিব নগর সহকারের শপথ ও স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল জাতীয় পরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে । মুজিব নগর সরকারের ইশতেহার লিখেছিলেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম যা তিনি স্বাধীনতার ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে বিচিত্রায় একটি নিবন্ধে প্রকাশ করেন । উক্ত ইশতেহারে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট সহ বঙ্গবন্ধুর ই পি আর ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রেরিত তারবার্তা কে মূল ভিক্তি ধরা হয়। যা ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশের সংবিধানে অবিকৃত ভাবে সংযোজিত হয়। সুতরাং এ নিয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ নেই যা ইতিহাসের মিমাংসিত সত্য।
বঙ্গবন্ধু ই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতিক তিনি বাঙ্গালীদের নিজস্ব দেশ উপহার দিয়ে গেছেন৷ তিনি চির জাগরুপ চির অম্লান। তার শত বিনিদ্র রজনী আর ত্যাগের ফসল আমাদের আজকের বাংলাদেশ।
আজকের সেমিনারে বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের সদস্য পিএইচডি গবেষক জনাব রণজিৎ মল্লিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের দু’টি অধ্যায়: প্রথমটি ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙে তার ফিরে আসা থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চে তার গ্রেফতার হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাওয়া পর্যন্ত, আর দ্বিতীয় অধ্যায় হচ্ছে ১৯৭২- তার স্বদেশে ফিরে আসা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে তার মৃত্যু পর্যন্ত।
তিনি বলেন, প্রথম পর্বে মুজিব বাঙালিকে রাষ্টীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন, আর দ্বিতীয় পর্বে তিনি রাষ্ট্রের নাগরিক ও সমাজকে সকল প্রকারের দাসত্ব থেকে মুক্ত করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন।
তার মতে বঙ্গবন্ধু তার স্বল্প পরিসরের মাত্র সারে তিন বছরের শাসনামলে এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল রুপকল্প প্রনয়ণ করে গেছেন। বস্তুত স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে তিনি তার কর্তৃক প্রণীত ছয় দফাকেই বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছিলেন।
অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার আব্দুস সাত্তার দুলাল জাতির পিতার আত্মার শান্তি কামনা করে বলেন, জাতির পিতা ছিলেন রাজনীতির কারিগর। তিনি স্বাধীনতা এনেছেন গনতন্ত্রের জন্য, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আর একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যাবস্থার জন্য।
সেমিনারে উপস্থিত বিশিষ্ট নারী উদ্যোগক্তা পারভীন আক্তার বলেন, জাতির পিতা নারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। একইভাবে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনাও নারীদের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বিশিষ্ট গণমাধ্যম কর্মী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, জাতির পিতার আহবান আর নির্দেশে বীর বাঙালি মুক্তি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তবে, মুক্তিযুদ্ধা কোটা সংস্কার করা আশু প্রয়োজন।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন, গোপালগঞ্জস্থ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক কুমার সরকার।