মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। দেশটির সামরিক বাহিনীর এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা। আহত হয়েছে আরও ৩৩ জন। সোমবারের (১৮ মার্চ) এই বোমা হামলা সামরিক শাসকরা বিনা উসকানিতে চালিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। খবর ইরাবতীর।
এদিকে বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সোমবার (১৮ মার্চ) এ কথা জানিয়ে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের বিস্তৃতি বাস্তুচ্যুতিই ঘটাচ্ছে শুধু। সেই সঙ্গে আগে বিদ্যমান বৈষম্য ও অসহায়ত্বকে বাড়িয়েই তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ঠেকাতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব। খবর বিবিসি ও ইরাবতীর।
ইরাবতীর বরাতে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সোমবার (১৮ মার্চ) সকালের দিকে দুটি বোমা থার্ডার গ্রামে ফেলা হয়। এতে গ্রামটির ধর্মীয় গুরু, তার স্ত্রী ও তাদের সন্তানসহ ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বোমা হামলায় আহত ১৮ আহতকে চিকিৎসা দিচ্ছে আরকান আর্মি (এএ)। আর স্থানীয় ক্লিনিক থেকে আরও ১৫ আহত চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইরাবতী জানিয়েছে, থার্ডার গ্রামে ৩০০ বাড়িতে দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাস করে। বোমা হামলার পর তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে তারা আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী নেয় সান লিয়ন বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যে অপরাধ করছে তার জন্য তারা কখনও শাস্তি পায়নি। তারা শুধু রোহিঙ্গা নয়, অন্যান্য জাতিগত মানুষের সঙ্গে অপরাধ করে চলেছে। এই অপরাধগুলো তখনই শেষ হবে যখন এর দায়মুক্তি শেষ হবে।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিনবিয়া শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এএ। এরপর থেকেই সেখানে ক্রমাগত বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। ইরাবতী জানিয়েছে, সিত্তওয়েতে অবস্থিত জান্তা ব্যাটালিয়নরা ৮ মার্চ রাত ১১টার দিকে মিনবিয়া শহরে গোলাবর্ষণ করে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই অশান্ত হয়ে ওঠে দেশটি। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছে মুসলিম রোহিঙ্গারা। ফলে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশির ভাগই ২০১৭ সালে সামরিক দমনপীড়নের পরে পালিয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা রোহিঙ্গাদের বিদেশি অনুপ্রবেশকারী মনে করে, তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে।
রোহিঙ্গা সমাজকর্মী নায় সান লিউইন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপকর্মের জন্য কখনও তাদের শাস্তি হয়নি। এই দায়মুক্তি তুলে নেয়া না হলে তাদের অপরাধ কখনও বন্ধ হবে না।