আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর জার্মানি থেকে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ কিন্তু কীভাবে ফেরত পাঠানো হয় তাদের? দেশটির এক রাজনীতিবিদ বলছেন, এই প্রক্রিয়াটি নাকি ‘অমানবিক’৷
গভীর রাতে কিংবা ভোর রাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনলে এমনিতেই শঙ্কা জাগে৷ আর জার্মানিতে অবস্থানরত যেসকল অভিবাসনপ্রত্যাশীর আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তাদের জন্য এমন কড়া নাড়ার শব্দ অনেক বেশি আতঙ্কের৷ কারণ এভাবে ভোর রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে জার্মান পুলিশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নতুন নয়৷ আর এখানেই শঙ্কা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যে, হয়তো দরজার ওপাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে এখনই বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে৷
জার্মানিতে এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘ব্লিটৎজ-আবশিবুংগেন’৷ তবে জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের একজন রাজনীতিবিদ ফ্রাঙ্ক রিশটারের মতে, দেশে ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়াটি অমানবিক৷ তিনি জানান, অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে থাকার সুযোগ দেওয়া হলে এটি তাদের জন্য এবং জার্মানির অর্থনীতির জন্য লাভজনক হতো৷
তার মতে, এ লোকগুলোর জীবনের উপর হুমকি ছিল বলেই তারা জার্মানিতে আশ্রয় নিতে চেয়েছে৷ তারা বড় ধরনের কোনো অপরাধ করেনি৷ ভাষা শিখে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল৷ স্যাক্সনি রাজ্যে এমন লোকদের দরকার৷ কিন্তু তারপরও তাদেরকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷
প্রত্যাবাসন চলছে
জার্মানির বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই এমন প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে৷ বিশেষ করে ‘ডুলডুং’ স্ট্যাটাসধারী আশ্রয় আবেদনকারীদের দেশ পাঠানোর বিষয়ে বিরোধিতা তাদের৷ ডুলডুং স্ট্যাস্টাস হলো এক বিশেষ ধরনের থাকার অনুমতি, যা আইন অনুযায়ী সাময়িক সময়ের জন্য কাযর্কর থাকে৷
অবশ্য গত বছর জার্মাান সরকার আশ্রয়প্রদান বিষয়ে দেশটির নীতি বদলের ঘোষণা দেয়, যার ফলে অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীই সাময়িকভাবে দেশটিতে থাকার সুযোগ পেতে পারেন৷
কিন্তু থেমে নেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া৷ গত ১১ মে জার্মানির লাইপজিশ থেকে একটি বিমানে করে আশ্রয়প্রার্থীদের টিউনিশিয়াতে ফেরত পাঠানো হয়৷ আর দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১১৯ জন৷
‘আমাদের অভিবাসী দরকার’
নিজের রাজ্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে ফ্রাঙ্ক রিশটার জানান, অভিবাসীদের যেমন স্যাক্সনিকে দরকার, তেমনি স্যাক্সনিরও অভিবাসী দরকার৷ দেশটির অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় স্যাক্সনি রাজ্যে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেশি৷ তার মতে, এভাবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ফলে এ রাজ্যের প্রায় সব অর্থনৈতিক খাতই – নার্সিং, পর্যটন, নির্মাণ খাত – ক্ষতির মুখে পড়ছে৷