নতুন একটা দিন, আলাদা ম্যাচ। সিকান্দার রাজা রয়ে গেলেন একই রকম।
দলের প্রয়োজনে লড়লেন, সময়ের প্রয়োজন বুঝে খেললেন পুরোটা সময়। কখন থামলেন? অবশ্যই দলকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে। সেঞ্চুরিও করলেন প্রথম ম্যাচের মতো। এবার তার সঙ্গী হলেন রেজিস চাকাভা, তিনিও ছুঁলেন তিন অঙ্ক।
তাদের দুজনের কল্যাণে হারারেতে হলো আরেকটা উৎসব। এবারেরটা আরও বড়, বাড়তি আনন্দের। ছুটির দিনে গ্যালারিতে বসা হাজারো মানুষের নৃত্যেই তার ছাপ স্পষ্ট। উপলক্ষটা সিরিজ জয়ের বলে কথা। হারারের গ্যালারির উল্লাস যেন ছড়িয়ে পড়ল পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই। জিম্বাবুয়ে হারিয়ে যায়নি এমন বার্তাও কি এলো? কে জানে!
রোববার তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে। আগে ব্যাট করে স্বাগতিকদের সামনে ২৯১ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ, ১৫ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেটে হারার পর এই ম্যাচে নিশ্চিত হয়েছে তামিম ইকবালদের সিরিজ হার।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ছিল দারুণ আক্রমণাত্মক, মিলছিল বড় রানের আভাস। অফ সাইডে ছয় ফিল্ডার রেখে ক্রমাগত অফ স্টাম্পের বাইরে বল করা হচ্ছিল তামিমকে। তিনি ফাঁকা জায়গা বের করে এর মধ্যেই হাঁকাচ্ছিলেন বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ৬২ রান। তামিম এক ছক্কাসহ হাঁকিয়েছিলেন ১১ বাউন্ডারি, এনামুল হক বিজয় একটি।
হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর অবশ্য সাজঘরে ফেরত যান তামিম। চিভাঙ্গার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন, ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ বলে ৫০ রান করে তিনি ক্যাচ তুলে দেন কাইতানোর হাতে। এরপর এনামুল হক বিজয় আউট হন অনেকটা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে।
চিভাঙ্গার বলে স্ট্রেট ড্রাইভ খেলেন শান্ত। বিজয় তখন নন স্ট্রাইক প্রান্তের দাগ থেকে খানিকটা এগিয়ে। চিভাঙ্গার হাত ছুঁয়ে বল স্টাম্পে লাগলে ৩ চারে ২৫ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় বিজয়কে। মাঝে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ৩১ বলে ২৫ রান করা মুশফিকুর রহিমও।
অন্য প্রান্তে অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মনে হচ্ছিল চার বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে যাবেন এই ব্যাটার। কিন্তু পারেননি তিনি। ধীরগতির ইনিংসের ইতি টানেন ৫৫ বলে ৩৮ রান করে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাদাভিরার বলে।
তার মতো একই ধরনের ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। কিন্তু শেষদিকের কিছু বাউন্ডারিতে নিজের ইনিংসে বল ও রানের ব্যবধান কিছুটা কমিয়ে আনতে পেরেছেন তিনি। তবে শট খেলতে তার দুর্ভোগ, রান নিতে গেলে হওয়া ভোগান্তি ফুটে উঠেছে স্পষ্ট। শেষ অবধি রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৪ বলে ৮০ রান।
বাংলাদেশের রানটার জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন আফিফ হোসেনও। ৪১ বলে ৪১ রান করা এই ব্যাটার অবশ্য আউট হয়েছেন হতাশাজনকভাবে। সিকান্দার রাজার বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে দাঁড়ানো চিভাঙ্গার হাতে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রানে থামতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
জবাব দিতে নামা স্বাগতিকরা শুরুতেই পড়ে দুই বছর পর দলে আসা হাসান মাহমুদের তোপে। নিজের ব্যক্তিগত প্রথম দুই ওভারে তিনি নেন দুই উইকেট। তাকুদওয়ানাশে কাইতানোকে শূন্য রানে ফিরিয়ে প্রথশ উইকেট পান তিনি। ডানহাতি পেসারের লাফিয়ে ওঠা বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে জমা হয়। জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ তখন কেবল ১ রান।
দলের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফের আঘাত হানেন হাসান। এবার প্রায় একই কায়দায় তার বলে ৭ রান করে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনে নামা জিম্বাবুইয়ান ব্যাটার ইনোসেন্ট কাইয়া। আগের ম্যাচে কাইয়া ১১০ রানের দারুণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন।
এরপর জিম্বাবুয়ের তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটান মেহেদী হাসান মিরাজ। চারে নামা ওয়েসলে মাধেভেরেকে ২ রানেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন টাইগার স্পিনার। যদিও আগের বলেই লেগ বিফোরের আবেদন ফিরিয়ে দেন আম্পায়ার। তবে পরের বলে ঠিকই আউটের সিদ্ধান্ত আসে।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে তাইজুলের বলে আলতো টোকায় বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন মারুমানি; কিন্তু বল তার ব্যাটের কানার লেগে জমা হয় কভার থেকে দৌড়ে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের মুঠোয়। ৪২ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন মারুমানি।
এরপরের গল্পটা কেবল সিকান্দার রাজা ও রেজিস চাকাভার। ২০১ রানের জুটি গড়েছেন, বলের গুণ বুঝে খেলেছেন, মিটিয়েছেন পরিস্থিতির দাবি। কখনও দারুণ সব শট খেলেছেন, কখনও আটকে দিয়েছেন দুর্দান্ত ডেলেভারি। মাঝে কেবল একবার সুযোগ এসেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে; রান আউটের।
কিন্তু এই অলরাউন্ডার কাজে লাগাতে পারেননি। ৪২ রানে থাকা সিকান্দার রাজাকে আউট করতে গিয়ে স্টাম্প ভেঙেছেন বল না থাকা হাত দিয়ে। চাকাভা অবশ্য ফিরে গেছেন আগেই। তবে তার আগে খেলেছেন ১০ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ বলে ১০২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
রাজা থেকেছেন অন্য প্রান্তে। তিনি না জিতিয়ে ফিরেন কী করে! ম্যাচে মাঝে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল, বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে হতো জিম্বাবুয়ের। দারুণ বল করছিলেন হাসান মাহমুদ-তাসকিন আহমদও। মনে হচ্ছিল কিছু একটা হলেও হতে পারে। কিন্তু শরিফুলের করা ৪৭তম ওভারে ১৯ রান নিয়ে সব জল্পনা শেষ করেন মুইনাঙ্গা। টানা দুই ম্যাচ হেরে এখন বাংলাদেশের সামনে শেষ ম্যাচ হয়ে গেছে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই!