Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

জুরাছড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় সিংহশয্যা বুদ্বমূর্তি জীবন্যাস পূণ্যানুষ্ঠান সম্পন্ন।

চাইথোয়াইমং মারমা ,রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হয়েছে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলায়। পরমপূজ্য বনভান্তের স্মরণে নির্মিত সিংহ শয্যা এই বুদ্ধমূর্তির দৈর্ঘ্য ১২৬ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৬০ ফুট। জুরাছড়ি এলাকাবাসীর দীর্ঘ প্রচেষ্ঠায় নির্মাণের সময় লেগেছে ৬ বছর। কোন সরকারি অর্থায়ন ছাড়া সাধারণ মানুষের দানের টাকায় নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।

বুদ্ধ প্রতিমূর্তি দানোৎসবকে ঘিরে শলক এলাকাবাসীর উদ্দ্যোগে তিন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। গত বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকালে মূর্তিটির ফলক উন্মোচন করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞাংলকার মহাস্থবির। বুধবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই পূণ্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে। ভগবান বুদ্ধের বিশালাকার এই বুদ্ধমূর্তি উন্মোচনের পর সকলের জন্য উন্মুক্ত করার মধ্যদিয়ে বৌদ্ধদের একটি তীর্থস্থান হিসেবে লাভ করেছে। এছাড়া বুদ্ধমূর্তির সামনে বিশালাকার খোলা স্থানে ফুল ও গাছপালার শোভা পাচ্ছে।

রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির বলেন, ‘বুদ্ধের ধর্ম অহিংস পরম ধর্ম। দেশের মানুষ যাতে সহিংস না হয়ে মৈত্রী পরায়ণ হয়। কারণ হিংসা ও প্রতিশোধের দ্বারা মানুষের প্রকৃত সুখশান্তি মঙ্গল হয় না। বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের ফলে ভগবান বুদ্ধের ধর্মের উপদেশ শিক্ষার দ্বারায় মানুষের সৎ বুদ্ধি উদয় হোক এই প্রত্যাশা করেন। ‘

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সমাপনী দিনে সকালের পর্বে কর্মসূচীর অনুষ্ঠানমঞ্চে ভিক্ষু সংঘ আসন গ্রহণ ও ফুলের তোড়া দিয়ে ভিক্ষু সংঘকে শ্রদ্ধা নিবেন করা হয়। ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে ত্রিরতœ বন্দনাসহ পঞ্চশীল গ্রহণ ও যাবতীয় দানকার্য উৎসর্গ করা হয়।

এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ। ১২৬ ফুট দৈর্ঘ্যর এই বুদ্ধ মূর্তি উদ্বোধনীর টানা তিন দিনের অনুষ্ঠানে লাখো দেশ-বিদেশের হাজারো বৌদ্ধ পুণ্যার্থীদের সমাগম ঘটে।

উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটি রাজ বন বিহারের পরিনির্বাণপ্রাপ্ত মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার সুবলং শাখা বন বিহারে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২১ সালের শেষ দিকে জনসাধারনের দেওয়া নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। বিহারের মোট সাড়ে ১২ একর জায়গার মধ্যে প্রায় এক একর জায়গার উপর স্থাপিত চোখ ধাধাঁনো নানান কারুকার্য করা হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রথম বুদ্ধমূর্তি সম্বোধন করে নানিয়ারচর বন বিহারের অধ্যক্ষ বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির বলেন, ‘জুরাছড়িতে নির্মিত ১২৬ ফুট সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি শুধু ভিক্ষুদের টাকা দিয়ে নয়, জনগণের অর্থ দানে করা হয়েছে। বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণের ফলে দেশ, জাতি ও সকলের মঙ্গল হবে। এই বুদ্ধমূর্তি বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সুখশান্তি আসবে আর কোনদিন মারামারি হানাহানি হবে না বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।’

ফুরমোন আন্তর্জাতিক বন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভৃগু মহাস্থবির বলেন, ‘এই বুদ্ধমূর্তি নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো বুদ্ধের জ্ঞান অর্জন করা। যেহেতু বুদ্ধের জ্ঞান অর্জন না হলে মানুষ দুঃখ মুক্তি লাভ করতে পারে না। জুরাছড়ি এলাকাবাসী অত্যন্ত খুশি। এতে বাংলাদেশ সরকারের আরো ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এটি দেখে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। এ পূণ্যে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রান্তের হতে হাজার হাজার বুদ্ধে ধর্মেরলম্বী অনুসারী সমাবেত হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী স্মৃতিবিন্দু চাকমা বলেন, ‘কোন সরকারি অর্থায়ন ছাড়া সম্পূর্ণ জনগনের অর্থায়নে এই বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণের ফলে আমরা চাই আরো বেশি উন্নতি সমৃদ্ধি হোক। এছাড়াও বুদ্ধমূর্তি তীর্থস্থান হিসেবে ভবিষ্যতে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

এই ধর্মীয় উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে লাখো বৌদ্ধ পূর্নার্থী অংশগ্রহণে মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত পাহাড়ের জুরাছড়ি উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তিটি স্থাপনের ফলে একদিকে উপজেলাটি দেশ-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছে অন্যদিকে পর্যটনের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখবে বলে সকলের প্রত্যাশায় রাখে ।

Check Also

ওমরাহ থেকে ফেরার সময় নির্ধারণ করে দিল সৌদি আরব

হজ শুরুর আগে যারা ওমরাহ পালন করতে গিয়েছেন তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x