জুলাইয়ে আমার ভূমিকা, সে সময়কার অনুভূতি ও আগামী জুলাইয়ের প্রত্যাশা
২০২৪ সালের জুলাই যেন এক অভ্যুত্থানের মাস, এক সাহসিকতার কাব্য, এক জাগরণের প্রতিচ্ছবি। এ মাসেই রাজপথে নেমে এসেছিল এক নবপ্রজন্ম—স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে। আমি সেই ইতিহাসের অংশ হতে পেরেছি, এ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গৌরব।
১৭ জুলাই থেকেই রাজপথে আমাদের অবস্থান শুরু হয়। ১৮ জুলাই, যাত্রাবাড়ী এবং রায়েরবাগ অঞ্চল আমরা গড়ে তুলি এক প্রতিবাদী দুর্গ—যেখানে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই এক কণ্ঠে গেয়ে উঠেছিল: ‘জুলুম চলবে না’। আমি সেদিন থেকে শুধু একজন আন্দোলনকারী নই, আমি হয়ে উঠি জনগণের দাবির এক অংশ, এক চলমান স্লোগান।
আমরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনকে সংগঠিত করি, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বুঝিয়ে দিই—এ লড়াই কারও বিরুদ্ধে নয়, এটা আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা সাহসিকতার সাথে। সেই মুহূর্তে আমি যেন অনুভব করছিলাম ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্পন্দন। বুকের ভিতর জ্বলছিল এক আগুন, চোখে ছিল সাহসের দীপ্তি।
কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তার নিষ্ঠুরতম রূপ দেখিয়েছিল। যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ, পুলিশের পৈশাচিক নির্মমতা, স্নাইপারের মতো আড়াল থেকে মানুষ হত্যা—এসব যেন ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়গুলোর পুনরাবৃত্তি। হেলিকপ্টার থেকে বন্দুক হাতে গুলি চালিয়ে যাকে হত্যা করা হয়েছিল, সে ছিল আমাদের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ—এক শিশু, যার হাসিটুকুও বুঝে উঠতে পারেনি এই নিষ্ঠুর পৃথিবী।
আমি নিজ চোখে দেখেছি আহতদের কাতর যন্ত্রণায় ছটফট করা, আমি কাঁদতে দেখেছি এক মায়ের মুখ—যে তার সন্তানের রক্তাক্ত শরীরকে জড়িয়ে ধরে বলছিল, “তুই তো স্কুলে যাস, রাজপথে কেন এলি?” আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু ভেতরে ছিল এক গর্জন—যা আবারও আমাকে রাজপথে ফেরাবে, যতবারই অন্যায় হবে।
আগামী জুলাইয়ের প্রত্যাশা
আগামী জুলাইয়ের জন্য আমার প্রত্যাশা একটি সুসংগঠিত এবং আদর্শিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানো আন্দোলন। আমরা চাই এই জাগরণ শুধু আবেগের ঢেউ না হয়ে হোক একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক শক্তির রূপান্তর, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানুষের মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে।
আমি চাই, শহীদদের রক্তের প্রতিফলন হোক একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রে। আগামী জুলাই যেন হয় নতুন সংগঠনের সাংগঠনিক উত্থানের মাস—যেখানে থাকবে নেতৃত্বের পরিপক্বতা, সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা এবং মানুষের প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা।
চাই, সেই শিশু শহীদের নামে একটি স্মৃতিফলক গড়ে উঠুক যাত্রাবাড়ীতে, চাই প্রতিটি অঞ্চলে ‘শহীদি চত্বর’ তৈরি হোক যেন ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে কখনো ভুলে যেতে না দেয়—এই আত্মত্যাগ কত বড়।
এই জুলাই আমাদের শিখিয়েছে যে, স্বপ্ন শুধু চোখে নয়—রাজপথেও বুনতে হয়। আর একবার কেউ রাজপথে নামলে, সে আর কখনো পূর্বের সেই মানুষ থাকে না—সে হয়ে ওঠে ইতিহাসের অংশ।
লেখক :
নাম : মো : সুরাইক হাসান সিয়াম
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : কবি নজরুল সরকারি কলেজ, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ (প্রথম বর্ষ)
সংগঠনের নাম : জুলাই বিপ্লব পরিষদের উপ মুখ পাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি।