ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা বিশেষ করে নির্বিচারে গুলি, হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে জাতিসংঘের ৩ সদস্যের টিম ঢাকা পৌঁছেছে।
বুধবার মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছায় দলটি। জানা গেছে, দলটি প্রাথমিকভাবে তথ্যানুসন্ধানের কাজ করবে।
প্রতিনিধি দলটি আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালেই যাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠক করার কথা রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করছেন।
প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেন তিন সদস্যের এ দলের নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় ঢাকায় তারা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবে। এ দলটি মূলত চূড়ান্তভাবে তদন্তের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। পরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন চূড়ান্তভাবে তদন্তের কাজটি করবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগ করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এর আগেও জানিয়েছিলেন, আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘকে সহায়তা করতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের চাওয়া একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। এ সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। যারা এ অপরাধগুলো করেছে এবং যারা হুকুম দিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং এ কাজে জাতিসংঘ সহায়তা করুক, এটা নিয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস জানিয়েছেন, জাতিসংঘের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল এসে প্রাথমিক তদন্তের কাজ করবে। তাদের ম্যান্ডেট (রাজনীতি) কী হবে, কিভাবে তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করবে, এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। প্রতিনিধিদল প্রাথমিক তদন্তের কাজের পাশাপাশি তাদের টার্মস অব রেফারেন্স (কাজের পরিধি), কাজের সময়সীমাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবে।
জেনেভা থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তদন্ত করতে যাচ্ছে, তখন কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে— জাতিসংঘের তদন্তকে সম্মান জানিয়ে এই সময় মানবাধিকার পরিষদে আলোচনা তোলা সমীচীন নয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৬৩০ জনেরও বেশি ছাত্র-জনতা মারা গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এসব ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করবে জাতিসংঘ।