ঝুলিতে চার চারটি বিশ্বকাপ, সেই সঙ্গে বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন তারা। আর সেই দলই কি না কাতার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে পারেনি! ইতালির জন্য ব্যাপারটি আশাহত হওয়ার মতোই। টানা ৩৭ ম্যাচ অপরাজিত থেকে পুঁচকে নর্থ মেসিডোনিয়ার কাছে হার, যাতে অবাকই হয়েছে অনেকে।
ম্যাচ হারের কারণ হিসেবে নিজেদের ঘাড়েই দোষ চাপাতে পারে ইতালি। অসংখ্য সুযোগ আসলেও আদায় করতে পারেনি দলটি। এতো সুযোগ হাতছাড়ার দিতে হলো চড়া মাশুল। বাছাই পর্বেই শেষ হয়ে গেল ইউরো চ্যাম্পিয়নদের কাতার বিশ্বকাপ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দুই আসরে খেলা হবে না ইতালির। অন্যদিকে লড়াকু জয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল নর্থ মেসিডোনিয়া।
শুরু থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত বল কেবল ঠেকিয়ে যাওয়া দলটিই বাজিমাত করল শেষ পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) প্লে-অফ সেমি-ফাইনালে ১-০ গোলে জিতে গেল নর্থ মেসিডোনিয়া। যোগ করা সময়ে গোল হজম করে ঘরের মাঠেই শেষ হয়ে গেলে ইতালির বিশ্বকাপে ফেরার অভিযান।
১৯৫৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হয় ইতালি। সুইডেনের কাছে হেরে ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি সবশেষ ২০০৬ সালে শিরোপা জেতা দলটি। এবার আলেসান্দার ত্রাজকোভস্কির অসাধারণ গোলে স্বপ্ন ভাঙল পালেরমোতে।
ঘরের মাঠে শুরু থেকে নর্থ মেসিডোনিয়াকে ভীষণভাবে চেপে ধরে ইতালি। ‘জে’ গ্রুপে রানার্সআপ হওয়া দলকে নিজেদের অর্ধ থেকে খুব একটা বের হতে দেয়নি তারা। বল দখল ও আক্রমণে অনেক এগিয়ে ছিল ইতালি। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে অসংখ্য সুযোগ হাতছাড়া করে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
নিজেদের রক্ষণভাগে মনোযোগী থাকা নর্থ মেসিডোনিয়া রক্ষণে ততটা পরিকল্পিত ছিল না। বল পায়ে এলে আক্রমণ রচনার কিংবা ধরে রাখার কোনো চেষ্টা ছিল না। বেশিরভাগ সময়ই এলোপাথারি লাথি দিয়ে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করেছে দলটি। ইতালির গোলরক্ষক ছাড়া বাকি ২১ জন বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন এক অর্ধে। ৩২তম মিনিটে লরেন্সো ইনসিনিয়ের দূরপাল্লার শট কাছের পোস্টে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের ইতালির লক্ষ্যে থাকা ১৫ শটের কেবল তিনটি ছিল লক্ষ্যে, তার একটি ছিল বুলেট গতির এই শট।
৩৭তম মিনিটে জটলা থেকে চিরো ইম্মোবিলের শট নর্থ মেসিডোনিয়ার একজনের পায়ে লেগে ব্যর্থ হয়ে যায়। পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণে বিপদে পড়তে যাচ্ছিল ইতালি। কিন্তু ডি-বক্সের ঠিক মাথায় দারুণ স্লাইডে সফরকারীদের দারুণ আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন আলেস্সান্দো ফ্লোরেন্সি।
প্রথমার্ধের বাকি সময়েও আক্রমণ করেই যায় ইতালি। কিন্তু সেগুলোর একটিও দেখেনি সফলতার মুখ। দ্বিতীয়ার্ধেও ছিল একই চিত্র। ৫৮তম মিনিটে মার্কো ভেরাত্তির ডিফেন্স চেরা পাসে ডি বক্সের মাথা থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বেরার্দি। নষ্ট হয় দারুণ আরেকটি সুযোগ।
এরপরও সুযোগ আসে, সুযোগ যায়, কিন্তু কাজে লাগানো আর হয়ে ওঠে না ইতালির। যোগ করা পাঁচ মিনিটের তখন দ্বিতীয় মিনিট চলে। ইতালি প্রস্তুতি নিচ্ছিল অতিরিক্ত সময়ের। ঠিক তখনই মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে আড়আড়ি শটে দূরের পোস্ট ঘেঁষে জাল খুঁজে নেন ত্রাজকোভস্কি। আর এতেই ভেস্তে য়ায় ইতালির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।
অন্য ম্যাচে তুরস্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্লে-অফ ফাইনালে উঠেছে পর্তুগাল। বিশ্বকাপে যাওয়ার লড়াইয়ে আগামী মঙ্গলবার নর্থ মেসিডোনিয়ার শেষ প্রতিপক্ষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল।