ঢাকা , শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসানকে বিদায় সংবর্ধনা পিরোজপুরে জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি ও জাতীয় পা‌র্টির ৫০ নেতাকর্মী  ফরিদগঞ্জে ৩য় মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন বরিশাল বন কর্মকর্তার ১৭ স্ত্রী, বিচার দাবিতে মানববন্ধন নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বড় রদবদলের আভাস বড়াইগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের পারস্পারিক মতবিনিময় সভা কাপ্তাইয়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা বলে প্রাথমিক ধারণা জামায়াতে ইসলামী ‘একটি চিতাবাঘ, যার দাগ বদলায় না’- হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ইসরাইলের ঔদ্ধত্যে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন তারেক রহমান পাংশায় জামায়াতের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন

ঠাকুরগাঁওয়ে কবরস্থানে অনিয়ম-দুর্নীতি, শেষ ঠিকানার কি ভয় নাই তাদের এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর

বেলাল হোসেন, ঠাকুরগাঁও

মানুষের শেষ ঠিকানা কবরস্থান, সেই কবরস্থানেও দুর্নীতি আর অনিয়ম। ঠাকুরগাঁওয়ে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এলজিইডি ও এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ঢালাই করা গ্রেডবিমগুলোর পলেস্টারে হাত দিলেই খুলে পড়ছে। এ অবস্থায় ক্ষুদ্ধ হয়ে তা গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় লোকজন।

তবে অনিয়মের কথা স্বীকার করে নতুন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাবুদ হোসেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) করবস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। করবস্থানের মতো জায়গাতেও অনিয়ম করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষর কঠোর শাস্তি দাবিসহ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন নেটিজনরা।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় একটি কবরস্থানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিক লাগিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভাঙছেন। তবে তাদের নির্মাণের ঢালাই করা গ্রেডবিমগুলোর পলেস্তারায় হাত দিলেই খসে পড়ছে। আর পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোদ চন্দ্র রায় ও সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েন এই দুই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজীপাড়া এলাকায় একটি গোরস্থানের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ পান আল আকসা নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ঢালাই করা হয়। পরদিন ঢালাই খুলে ফেললে পলেস্তারা খসে পড়ছিল। এসময় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ লোকজন প্রতিবাদ জানিয়ে সেই কাজ বন্ধের পাশাপাশি পিলারসহ গ্রেডবিম গুড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার মানুষ সচেতন বলেই অনিয়ম ধরতে পেরেছেন। মানুষ মারা গেলে কবরস্থানে মাটি দিবে সেখানেও অনিয়ম করে কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার। এখানে এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশ আছে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ খুতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই দাবি করেন তারা।
রফিকুল ইসলাম ও সাজ্জাত নামে দুই যুবক বলেন, কবরস্থানেও যদি ঠিকাদার ও এলজিইডির লোকজন অনিয়ম করে এটার মতো দুঃখজনক আর কিছুই নাই। এই কবরস্থানে আমাদের মা-বাবা-আত্নীয় স্বজনরা সবাই শুয়ে আছে আর এলজিইডি ও ঠিকাদারের লোকজন প্রাচীর নির্মাণের নামে চুরি করছে। এরা কি মানুষ না অমানুষ? অবশ্যই এখানে এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এই অনিয়ম গুলো হচ্ছে। ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হউক এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের চাকুরীচ্যুত করা হউক। তারা করবস্থানে এসেও লুটপাট শুরু করেছে। এরা কি কোন দিনও মারা যাবে না? এদের এই সমাজে বেচে থাকাও পাপ।
এবিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল আকসার প্রতিনিধি পশিরুল ইসলাম জানান, আগের ঢালাই করা নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোত চন্দ্র রায় জানান, এটা তদারকির অভাবে অনিয়ম হয়েছে। ঢালাইয়ে সিমেন্ট কম, বালুর পরিমাণ বেশি ছিল। কাজ করার সময় না জানিয়ে করেছে ঠিকাদার। আর সে কারণে অনিয়ম করেছেন তিনি। ঠিকাদারকে পুনরায় ভেঙে আবার নতুন করে গ্রেডবিমগুলোতে ঢালাই দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ মাবুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিয়ম হলো ঢালাই করার দুই সাপ্তাহ পর স্যাটারিং খোলা হয়। কিন্তু ঠিকাদার তা না করে মাত্র একদিন পরেই তা খুলে কাজ শুরু করে দেয়। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তিনি পুনরায় কাজ করে দিবেন। এ কাজে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
এরআগেও এলজিইডি ও কিছু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিল। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ঠিকাদারের পক্ষে নিয়েই কাজ করেছেন।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৬:২২:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
৫৬৩ Time View

ঠাকুরগাঁওয়ে কবরস্থানে অনিয়ম-দুর্নীতি, শেষ ঠিকানার কি ভয় নাই তাদের এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর

আপডেটের সময় : ০৬:২২:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

মানুষের শেষ ঠিকানা কবরস্থান, সেই কবরস্থানেও দুর্নীতি আর অনিয়ম। ঠাকুরগাঁওয়ে কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এলজিইডি ও এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ঢালাই করা গ্রেডবিমগুলোর পলেস্টারে হাত দিলেই খুলে পড়ছে। এ অবস্থায় ক্ষুদ্ধ হয়ে তা গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় লোকজন।

তবে অনিয়মের কথা স্বীকার করে নতুন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাবুদ হোসেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) করবস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। করবস্থানের মতো জায়গাতেও অনিয়ম করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষর কঠোর শাস্তি দাবিসহ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন নেটিজনরা।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কাজীপাড়া এলাকায় একটি কবরস্থানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিক লাগিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভাঙছেন। তবে তাদের নির্মাণের ঢালাই করা গ্রেডবিমগুলোর পলেস্তারায় হাত দিলেই খসে পড়ছে। আর পাশে দাড়িয়ে ছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোদ চন্দ্র রায় ও সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েন এই দুই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে তারা কাজ বন্ধ করে দেয়।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজীপাড়া এলাকায় একটি গোরস্থানের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ পান আল আকসা নামে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ঢালাই করা হয়। পরদিন ঢালাই খুলে ফেললে পলেস্তারা খসে পড়ছিল। এসময় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ লোকজন প্রতিবাদ জানিয়ে সেই কাজ বন্ধের পাশাপাশি পিলারসহ গ্রেডবিম গুড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার মানুষ সচেতন বলেই অনিয়ম ধরতে পেরেছেন। মানুষ মারা গেলে কবরস্থানে মাটি দিবে সেখানেও অনিয়ম করে কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার। এখানে এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশ আছে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ খুতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই দাবি করেন তারা।
রফিকুল ইসলাম ও সাজ্জাত নামে দুই যুবক বলেন, কবরস্থানেও যদি ঠিকাদার ও এলজিইডির লোকজন অনিয়ম করে এটার মতো দুঃখজনক আর কিছুই নাই। এই কবরস্থানে আমাদের মা-বাবা-আত্নীয় স্বজনরা সবাই শুয়ে আছে আর এলজিইডি ও ঠিকাদারের লোকজন প্রাচীর নির্মাণের নামে চুরি করছে। এরা কি মানুষ না অমানুষ? অবশ্যই এখানে এলজিইডির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এই অনিয়ম গুলো হচ্ছে। ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হউক এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের চাকুরীচ্যুত করা হউক। তারা করবস্থানে এসেও লুটপাট শুরু করেছে। এরা কি কোন দিনও মারা যাবে না? এদের এই সমাজে বেচে থাকাও পাপ।
এবিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আল আকসার প্রতিনিধি পশিরুল ইসলাম জানান, আগের ঢালাই করা নির্মিত গ্রেডবিমগুলো ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
এব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী প্রমোত চন্দ্র রায় জানান, এটা তদারকির অভাবে অনিয়ম হয়েছে। ঢালাইয়ে সিমেন্ট কম, বালুর পরিমাণ বেশি ছিল। কাজ করার সময় না জানিয়ে করেছে ঠিকাদার। আর সে কারণে অনিয়ম করেছেন তিনি। ঠিকাদারকে পুনরায় ভেঙে আবার নতুন করে গ্রেডবিমগুলোতে ঢালাই দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ মাবুদ হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিয়ম হলো ঢালাই করার দুই সাপ্তাহ পর স্যাটারিং খোলা হয়। কিন্তু ঠিকাদার তা না করে মাত্র একদিন পরেই তা খুলে কাজ শুরু করে দেয়। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তিনি পুনরায় কাজ করে দিবেন। এ কাজে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের অবহেলা আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
এরআগেও এলজিইডি ও কিছু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছিল। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ঠিকাদারের পক্ষে নিয়েই কাজ করেছেন।