মনির হোসেন: চাঁদপুর তিন নদীর মোহনা হতে হাজিগঞ্জ অভিমুখী ডাকাতিয়া নদী। যার উপকারের কোন শেষ নেই। নদীর দুই পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ ছাড়াও উপকার পাচ্ছেন দূর-দূরান্তের অগণিত মানুষ। কারণ পরিবহন খাতে এই নদী মানুষের উপকারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে।
এছাড়া এই নদীর প্রবাহমান জোয়ার ভাটায় একস্থান হতে অন্য স্থানে পলিমাটি নিয়ে ফসলের ব্যাপক উৎপাদনে সাহায্য করছে। এবং এই ডাকাতিয়া নদীর পানি সেচ পাম্পের সাহায্যে ব্যবহার করে নদীর দু’পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ ফসল উৎপাদন সহ কত ধরনের উপকার পাচ্ছে যার কোন শেষ নেই। কিন্তু ডাকাতিয়া এই নদীর অসামান্য উপকার থাকলেও এর দ্বারা নদীর দু’পাড়ের মানুষের ক্ষতির ও কোন শেষ নেই। সেই ক্ষতির অংশবিশেষ হিসেবে খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১ও ২ নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের নদী পাড়ের মানুষের। তাদের অভিযোগের আলোকে ফরিদগঞ্জের উত্তরে ডাকাতিয়া নদীর পাড় আশরাফুল উলুম এতিম মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে গেলে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদী গিলে খাচ্ছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানচিত্রের শেষ অংশ। এবং ডাকাতিয়ার অন্যপাড় চাঁদপুর সদর উপজেলার মানচিত্রের অংশ বছর বছর পরিবর্তন হয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ সময় নদীর পাড়ের মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন ডাকাতিয়া নদী বর্তমান ডাকাতিয়া নদী থেকে উত্তর পাড়ের চরের অনেক উত্তরে ছিল। ৯০ বছর বয়সের উপরে রেজওয়ান নামের একজন বলেন আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ডাকাতিয়া নদী উত্তর পাড়ের চরের উত্তরে চৌকিদার বাড়ির পাশ দিয়ে ছিল। গত ৭৯/ ৮০ বছরে নদী ভেঙ্গে ভেঙ্গে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। এবং আমাদের ফরিদগঞ্জের অংশ উত্তর পাড়ে চলে যায়। এবং ওই সম্পত্তি আমাদেরকে দখল দেয় না। এমদাদ বেপারী (৭০) বলেন আমি নদী অনেক উত্তরে দেখেছি। এখন ফরিদগঞ্জের অংশ ভেঙ্গে চাঁদপুর সদরে চলে গেছে। এবং ফরিদগঞ্জ অংশের নদী পাড়ের মানুষের সম্পদ ডাকাতিয়া গিলে খাচ্ছে। আর সদর উপজেলার মানুষ সেই জমি ভাগ বন্টন করে খায়।
অন্যদিকে আশরাফ হোসেন মানিক নামের একজন বলেন, ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়ের সম্পদ সম্পূর্ণরূপে আমাদের এবং মানচিত্রের আলোকে উত্তর পাড়ের সেই চর হবে ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষ অংশ। কিন্তু প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের ফরিদগঞ্জের মানচিত্রের শেষ অংশ দখল করে আছে চাঁদপুর সদরের মানুষ। আমরা নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সকদিরামপুর, কৃষ্ণপুর, ইসলামপুর, বেহারী পুর, বলিয়ার পুরের মানুষের দাবি সরকার ডাকাতিয়া নদীর দক্ষিণ পাড় ভাঙ্গা থেকে আমাদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবেন। সকদিরামপুর আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা কাউসার আহমেদ বলেন, তিনি মাদ্রাসায় চাকরির সুবাদে এই এলাকায় গত ২৫ বছর অবস্থান করছেন।
তিনি প্রথমে এসে দেখেছেন এ নদী বর্তমান জায়গা থেকে অনেক উত্তরে ছিলো। এই নদী দিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাতের ট্রলার চলাচলের কারণে দক্ষিণ পাড় ভেঙ্গে উত্তরপাড়ে চর জমেছে। এবং চাঁদপুর সদরের মানুষ সে চর দখল করে খায়। এছাড়া নদীর পাড়ের সরকারি রাস্তা নামকাওয়াস্তে বারবার মেরামত করলেও তা নদী গিলে নেয়। আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এলজিইডি নির্মিত ব্রিজটি হয়তো যেকোনো মুহূর্তে নদী গিলে খাবে। এছাড়া মাদ্রাসা-মসজিদ হয়তো আর কয়েক বছরের মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে তিনি বলেন। তার আকুল আবেদন এই মাদ্রাসায় এ পর্যন্ত কয়েক হাজার এতিম ছাত্র হাফেজ হয়ে মানুষ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র পড়ালেখা করে হাফেজ হয়ে ভালোভাবে দিনাতিপাত করছে। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান ও এলজিইডির ব্রিজ, কয়েক গ্রামের মানুষের জান-মালের হেফাজতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুতগতিতে নদীভাঙ্গা থেকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসবেন বলে তিনি জানান।
বিষয়টি নিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন স্বপন নিয়াজীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র চেয়ারম্যান হয়েছি। এখনো আমার দায়িত্ব পালন শুরু হয়নি। আমি দায়িত্ব পালন শুরু করলে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন বলে জানান। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন নাহারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।