মোঃজিলহাজ বাবু ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রাইভেট চেম্বারে অগ্রিম টাকা নিয়েও সরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের পর রোগী বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। অপারেশন সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কেনার পরেও রোগী অপারেশন না করার অভিযোগ রোগীর পরিবারের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার মসজিদপাড়া মহল্লার মৃত রবু প্রামাণিকের স্ত্রী মোসা. গোলেনুর বেগমের (৭৫) ডান পায়ের উরুর জোড়ায় (হিপ জয়েন্ট) অপারেশনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানায়, রোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, আগের সব রিপোর্ট দেখেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জন ডা. মো. ইসমাইল হোসেন অপারেশন করার দিন নির্ধারন করেন। পরে রোগীর পরিবারকে সকল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কিনতে বলেন ও বুধবার সকালে অপারেশনের জন্য থিয়েটারে নেয়া হয়।
অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আধা ঘণ্টা পরে রোগীর পরিবারকে তিনি জানান, তারা অপারেশন করবেন না। এমনকি রোগী ও তার পরিবার নানারকম ভয়ভীতি দেখান বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে অতিরিক্ত ঝুঁকির কারনেই এ্যানেসথেসিয়ার (অজ্ঞান) চিকিৎসক অপারেশনে রাজি না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগী বের করা হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রোগী, তার পরিবার, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ দিন বাড়িতে পড়ে গিয়ে উরুর জোড়া বিছিন্ন হয় গোলেনুর বেগমের। এনিয়ে গত ৯ দিন থেকে জেলা হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় অর্থপেডিক বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। পরে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) গোলেনুরের ছেলে আনারুল ইসলাম কালুকে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) অপারেশন করার কথা জানান। এসময় কালুকে সব সরঞ্জামাদি ও প্রস্তুতি নিতে বলেন ডা. ইসমাইল হোসেন।
রোগী গোলেনুর বেগম জানান, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তাররা আমাকে জিজ্ঞেস করি আমি কি ভয় পাচ্ছি কি না। আমি জানায় ভয় পায়নি। কিন্তু শরীরে জ্বর ছিল। পরে ডা. ইসমাইল হোসেন বলেন, অপারেশনের আগেই ৫ জন লোক এসেছে, কিছু হলে আরও ঝামেলা বাড়বে। অথচ আমি অসুস্থ, আমাকে কোলে তুলে নিয়ে গেছিল তারা। এর শরীর ভালো নাই, অপারেশন করা যাবে না বলে আমাকে বের করে দেয়।
রোগী গোলেনুর বেগমের নাতি মো. ইব্রাহিম বলেন, আজকে অপারেশন করতে হবে জানিয়ে আমাকে রক্ত ম্যানেজ করতে বলেন। আমি নিজেই রক্ত দান করি। আমার দাদিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর আমার দাদিকেও অনেক ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে অপারেশন হবে না জানিয়ে বের করে দেয়া হয়। অথচ আমরা বলেছিলার আপনারা অপারেশন করেন, আমরা টাকা ম্যানেজ করছি এবং সবকিছু ম্যানেজ হয়েও গেছিল। বের করে দেয়ার কারন জানতে চাইলেও কিছুই বলেনি।
তিনি আরও বলেন, মোট ২০ হাজার টাকা চুক্তি হলেও অগ্রিম দেয়া হয়েছিল ১৩ হাজার টাকা। বাকি ছিল অপারেশন থিয়েটার চার্জ ৭ হাজার টাকা। সেও টাকা আমরা ম্যানেজ করেছি। কিন্তু তার আগেই ওটি থেকে আমার দাদিকে বের করে দেয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে অপারেশন হলেও অগ্রিম যে ১৩ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, সেটা ডা. ইসমাইল নিয়েছিলেন, তার ব্যক্তিগত চেম্বারে।
রোগের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম কালু জানান, মায়ের অপারেশন করতে মোট ৪০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন ডা. ইসমাইল হোসেন। পরে তা কমে ২০ হাজার টাকায় অপারেশন করতে রাজি হয়। আমরা সাধারণত জানি, চিকিৎসক শুধু অপারেশন করবেন ও অপারেশন করতে যা যা লাগবে আমাদের লিখে দিবেন, আমরা তা কিনে নিয়ে রাখব। কিন্তু ডা. ইসমাইল হোসেন অপারেশনের সকলের সরঞ্জাম ধরেই মোট ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তার দাম প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা। সরঞ্জামাদি ও অপারেশন থিয়েটার চার্জ মিলে তার সাথে ২০ হাজার টাকার কথা হয়।
গোলেনুর বেগমের নাতবউ মমিরণ খাতুন বলেন, ডা. ইসমাইল হোসেন রোগীদের সাথে খুবই বাজে আচরণ করেন। ঠিকমতো কথা বলেন। রোগী দেখতে আসলে ভালোভাবে রিপোর্ট না দেখেই ওষুধ লিখে দিয়ে যান। সরকারি হাসপাতালে সরকারি ডাক্তারের এমন ব্যবহার হওয়া উচিত নয়। রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত।
এবিষয়ে ডা. ইসমাইল হোসেন জানান, জটিল অপারেশন হওয়ার কারনে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরেও বের করা হয়েছে। কারন এই অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে এ্যানেসথেসিয়া (অজ্ঞান) চিকিৎসক রোগীকে অজ্ঞান করতে রাজি হয়নি।
এবিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, রোগীর অবস্থা এমন নয় যে, এখনই অপারেশন না করলে মারা যাবেন। কিন্তু অপারেশন করলেই তার মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। তাই সবদিক বিবেচনায় নিয়ে অপারেশনের সীধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সাথে কথা হয়েছে। এবিষয়ে আরও চিন্তা ভাবনা করে কয়েক দিন পরে হলেও অপারেশন করা হবে।
উল্লেখ্যা, রোগী মোসা. গোলেনুর বেগমের ছেলে মো. আনারুল ইসলাম কালু মিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের সাইকেল-মটরসাইকেলের গ্যারেজ তত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন।