একই দিনে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ২৩টি শর্তে সমাবেশের করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ডিএমপির দেওয়া এসব শর্তগুলো শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল। দুই দলের সমাবেশস্থলসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ শর্তই মানেনি কোনো রাজনৈতিক দল।
সরকারপতনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করতে বিএনপি সমাবেশ করেছে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নেতা কর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। ডিএমপির দেওয়া শর্ত সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা পূর্বে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য বলা হলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিএনপির বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে ভরে যায় সমাবেশস্থল। এতে আশপাশের সড়কগুলো যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) থাকার কথা শর্তে উল্লেখ করা কথা থাকলেও বাস্তবে তা ছিল না। তবে শৃঙ্খলে বজায় রাখতে কিছু স্বেচ্ছাসেবককে কাজ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার কথা বলা হলেও কোনো সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি বলে জানায় দলটির নেতা কর্মীরা। মাইক ব্যবহারের যে অনুমতি দেওয়া হয়, সেটাও লঙ্ঘন করেছে দলটি।
আর বিকেল ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করার কথা থাকলেও সমাবেশের প্রধান অতিথি সাড়ে পাঁচটার দিকে বক্তব্য শুরু করেন। সমাবেশ শেষ হতে প্রায় ৬টা বেজে যায়। এ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু বিএনপির সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করা হয় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। ফলে, বেলা ১১টার পর থেকে ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়গামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর বেলা ১টার পর থেকে কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় দিকে সড়কে নেতা কর্মীরা অবস্থান নিলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিকের সড়কে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই শান্তি সমাবেশ শুরু হয়। তবে এর আগেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর শাখার নেতা কর্মীদের সমাবেশে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এ ছাড়া রাজধানীর আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও নেতা কর্মীরা সমাবেশস্থলে এসে অবস্থান নেন।
ডিএমপির দেওয়া শর্ত পালনে অনীহা দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলটির। নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগের কথা থাকলেও সমাবেশস্থলে দৃশ্যমান আইডি কার্ড পরা কাউকে দেখা যায়নি। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু সমাবেশস্থল বা তার আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা দেখা যায়নি।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিংয়ের শর্ত দিয়েছিল ডিএমপি কিন্তু সমাবেশ স্থলে এমন কোনো যন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়নি। ছিল না অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও। এ ছাড়া শব্দদূষণ নিয়ম না মেনে সমাবেশস্থলের বাইরেও লাগানো হয়েছে মাইক। এ ছাড়া অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত না হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের।