ডিজিটাল কোর্ট ও অনলাইন বিচার: স্বচ্ছতার নতুন দিগন্ত না নতুন সংকট?
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি বাস্তবতা। করোনা মহামারির সময় শুরু হওয়া অনলাইন আদালত কার্যক্রম বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ই-কোর্ট ব্যবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও রায় প্রদানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা আগের তুলনায় সময়, খরচ ও ভোগান্তি থেকে অনেকটাই মুক্ত হয়েছেন।
গ্রামীণ বা দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষও এখন ঘরে বসেই আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন—যা একসময় অকল্পনীয় ছিল। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, এই সুবিধা সবার জন্য সমান নয়। ইন্টারনেট সংযোগের দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং অনেকের ডিজিটাল দক্ষতার অভাব এখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জের কৃষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ভিডিও কলে বিচার ব্যবস্থা ভালো উদ্যোগ, কিন্তু গ্রামের দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে অনেক সময় অংশ নেওয়া কঠিন।
” স্থানীয় দোকানদার মো লাদেন বলেন, “অনলাইন কোর্টে সময় ও খরচ কমে, তবে সবাই প্রযুক্তি ব্যবহার জানে না—সেজন্য প্রশিক্ষণ দরকার।”
এই বক্তব্যগুলো আসলে বড় একটি বাস্তবতার প্রতিফলন। প্রযুক্তি বিচার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করেছে বটে, কিন্তু এর সঙ্গে সামাজিক ও অবকাঠামোগত সমতা এখনও অর্জিত হয়নি। বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটাল রূপান্তরকে সফল করতে হলে শুধু প্রযুক্তি নয়, মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিও জরুরি।
তবে ইতিবাচক দিকও উপেক্ষা করা যায় না। মামলার অগ্রগতি অনলাইনে দেখা, রায় প্রকাশ, এবং ডিজিটাল ডেটা সংরক্ষণ দুর্নীতি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এতে বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ছে।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রযুক্তিনির্ভর বিচারব্যবস্থা কি সবার জন্য সমানভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারছে? যদি না পারে, তবে এটি নতুন এক বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে।
অতএব, ডিজিটাল কোর্ট আমাদের সামনে একদিকে স্বচ্ছতার নতুন দিগন্ত খুলেছে, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত ও মানবিক সীমাবদ্ধতার নতুন সংকটও তৈরি করেছে। এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।



























