বিশ্বের যেকটি দেশে ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে তার মধ্যে খুব বেশি ব্যাংক লাভজনক অবস্থায় নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক এ ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে। এজন্য ডিজিটাল ব্যাংক করলেই সফলতা পাওয়া যাবে এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। এক কথায় এটি সহজ জার্নি নয়।
শনিবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪র্থ বাংলাদেশ ফিনটেক সামিটের আলোচনায় এ কথা জানান কুইনল্যান্ অ্যাসোসিয়েটস ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বেঞ্জামিন কুইনলান।
বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক কতটা সফলতা পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে তো মাত্র ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের কার্যক্রম শুরু হলো। ব্যাংক গঠনের পর সফলতা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তবে ডিজিটাল ব্যাংকের সফলতা পেতে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে।
বেঞ্জামিন বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকের সফলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। প্রচলিত ব্যাংক থাকার পরও এ ধরণের ব্যাংকে গ্রাহক টানতে প্রচার-প্রচারণা করতে হয়। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের লাভের জন্য সময় দিতে হয়। এসব ব্যাংকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তথ্য সংরক্ষণ। এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী আইটি দলের বিকল্প নেই। এছাড়া বাছাইকৃত মেধাবী কর্মী ছাড়া কোনো ডিজিটাল ব্যাংক সফলতা পাবে না। কারণ এসব ব্যাংকে অন্যান্য প্রচলিত ও ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর সাথে সমন্বয় করতে হয়।
তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সফল হচ্ছে, চীনের উই ব্যাংক। এই ব্যাংক ২০২২ সালে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার লাভ করেছে। ব্যাংকটির গ্রাহক ৩৬ কোটি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাউথ কোরিয়া কাকাউ ব্যাংক। এছাড়া ভারতের এয়ারটেল ডিজিটাল ব্যাংক বিশ্বের শীর্ষ ৫ ব্যাংকের একটি।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, বঙ্গবাজারে আগুনের সময় ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ পুড়ে ছাই হয়েছে। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগও নগদ টাকার ক্ষতি করে। কিন্তু ডিজিটাল লেনদেন চালু হলে এসব সমস্যায় পড়তে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অপর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা। এছাড়া নতুন বাজারে ডিজিটাল লেনদেন খুবই চ্যালেঞ্জিং বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ফিনটেক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে ফিনটেক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ, স্মার্ট অর্থনীতির প্রধান অনুসঙ্গ দেশের ফিনটেক। বাংলাদেশ ফিনটেক ফোরাম নীতি প্রণয়ন এবং বিভিন্ন অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ফিনটেক শিল্পের অগ্রসরে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী, আজকের যাবতীয় আলোচনা এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় দেশের এই সম্ভাবনাময় খাতের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
দিনব্যাপী ফিনটেক সামিটে বাংলাদেশ এবং বহির্বিশ্বের ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন খাতের উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ, কর্মজীবী এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতারা অংশগ্রহণ করেন। ‘শেপিং বাংলাদেশ ফিনটেক ইকোসিস্টেম ফর দ্য ফিউচার’ বা ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের ফিনটেক খাতকে প্রস্তুত করার প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দিনব্যাপী বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করেন। আয়োজনটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো ফিনটেক উদ্ভাবনীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয় এবং ফিনটেক উদ্ভাবনকে আরও অধিক প্রশস্ত করার একটা দিকনির্দেশনা প্রণয়ন করা।
৪টি কিনোট সেশন, ৩টি প্যানেল ডিসকাশন, ৪টি ইনসাইট সেশন, ১টি কেস স্টাডি, ১ টি ফায়ারসাইড চ্যাট এবং ১টি কনভারসেশনের সমন্বয়ে এই বছরের ফিনটেক সামিটটি অনুষ্ঠিত হয়।
৪র্থ ফিনটেক সামিটের বিভিন্ন আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং খাতের উপর্যুপরি পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা, বাংলাদেশের ফিনটেক উদ্ভাবনীর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ধাপ, সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিকভাবে প্রচলিত রীতিরগুলোর বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক, ফিনটেকের বিকাশে ব্লকচেইনের গুরুত্বসহ স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশনের ফিনটেক খাতকে সমৃদ্ধ করার নানামুখী উদ্যোগসমূহ।
মাস্টারকার্ডের সৌজন্যে, বিকাশ লিমিটেডের সঞ্চালনায় এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, উপায়, বেসিস এবং দ্য ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় আয়োজিত ৪র্থ বাংলাদেশ ফিনটেক সামিটটি বাংলাদেশ ফিনটেক ফোরামের একটি উদ্যোগ। সামিটটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার-এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই), ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস ফাউন্ডেশন, স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক; ইনোভেশন পার্টনার: বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভ; হসপিটালিটি পার্টনার- রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন; টেকনোলজি পার্টনার- আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড এবং পিআর পার্টনার- ব্যাকপেজ পিআর।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, জায়তুন বিজনেস কনসালটেন্টসের চেয়ারম্যান আরফান আলী, পিডব্লিউসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ক্লায়েন্টস অ্যান্ড মার্কেটস লিড মামুন রশিদ, ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হৃষিকেশ মেহতা, আইডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, বিকাশের সিইও কামাল কাদির।