জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষি জমিতে বাহারি নামের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে হাউজিং প্রকল্পের নামে প্রতারণা চলছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন কৃষক ও স্থানীয়রা। কৃষক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েকটি হাউজিং প্রকল্প হাউজিং প্রকল্পের নামে কৃষিজমি গিলে খাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমির ভাড়ায় সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এজন্য কোম্পানিগুলো কৃষকদেরকে মাসিক কিংবা বাৎসরিক ভাড়া প্রদান করেন। কোন কোন কোম্পানি একটা স্থানে সামান্য পরিমান কিছু জমি কিনে পুরো এলাকায় তাদের কোম্পানির সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। কোন কোন কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা নিজেদের ক্রয়কৃত জমি ভরাটের সময় পার্শবর্তী জমিতেও বালু ফেলে । পরে বেদখল হওয়ার ভয়ে কৃষকরা ওইসব কোম্পানির নিকট নিজেদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানাগেছে, চোখের সামনেই পাল্টে যাচ্ছে কৃষি জমির ধরণ। উপজেলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক ( ঢাকা –মাওয়া ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের) পার্শ্ববর্তী বীরতারা, হাঁষাড়া, আটপাড়া ও বাড়ৈখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ কৃষি জমিগুলোতে বিভিন্ন নামে বেনামের হাউজিং প্রকল্পের সাইন বোর্ড ঝুলছে ফসলি জমির উপর। কয়েক বছর পর কৃষি জমির কোন চিহ্নই হয়ত আর থাকবে না । অতিলোভে কৃষকরা তাদের তাদের বিভিন্ন কোম্পানিকে ভাড়ার পাওয়ার লোভে সাইনবোর্ড স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। হাউজিং কোম্পানির লোকজন সহজ সরল কৃষকদের লোভ লালসা দেখিয়ে তাদের জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপনের জন্য জমি ভাড়া নেন। জমির মূল মালিকের কাছ থেকে জমিতে সাইনবোর্ড লাগানোর অনুমতি নিয়ে সেখানে হাউজিং প্রকল্পগুলো তাদের বাহাড়ি সিটি নামের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। এছাড়াও কোন এলাকায় দু”একটা জমি কিনতে পারলে আশপাশ এলাকার জমি গুলোতেও কৃষকদের মাসিক, বাৎসরিক ভাড়া দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন হাউজিং প্রকল্পের লোকজন। এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
কৃষক ও স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, জমি কৃষকদের , সাইনবোর্ড কোম্পানির। কৃষি জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তারা ব্যবসা করছে। এসব কোম্পানির অধাকাংশেরই কোন সরকারি কোন অনুমোদন নেই । সর্বনিম্ন ৫ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ জমি কিনে সাইনবোর্ড টানিয়ে ব্যবসা শুরু করে এসব কোম্পানি।বিস্তীর্ণ ফসলি জমিগুলোতে যেভাবে সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে তা দেখে মনে হবে জমিগুলো হাউজিং প্রকল্পেরই। কিন্তু বাস্তবে জমিগুলো ভাড়া নিয়ে টানানো হয়েছে অধিকাংশ হাউজিং প্রকল্পের সাইনবোর্ড।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, হাউজিং প্রকল্পগুলোর এই ব্যবসা পরিচালনা করতে পরিবেশের ছাড়পত্র, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এনওসি ও জেলা প্রশাসকের অনুমতিপত্র লাগে। যেসব কোম্পানির এই কাগজপত্রগুলো নেই সেই কোম্পানির কাছ থেকে কেউ জমি কিনলে বিপাকে পড়বেন। কারণ জমি কেনার পর রেজিস্ট্রি কিংবা রেজিস্ট্রি করার পর নামজারি করতে গেলে উপরোক্ত চারটি কাগজ ছাড়া নামজারি করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার কারণে অনেক ভুক্তভোগী কোম্পানির নিকট থেকে জমি কেনার জন্য বুকিং দিয়ে এখনও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেনা বলেও জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তবে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি ক্রয় করতে পারলে কোন সমস্যার পড়তে হয়না বলেও জানান একাধিক ভুক্তভোগী।
শ্রীনগর সহকারি কমিশনার (ভূমি ) আবুবকর সিদ্দিক জানান, শ্রীনগরে কয়টি হাউজিং প্রকল্প আর কতগুলোর বৈধতা আছে এসবের কোন তথ্য আমার জানা নেই। হাউজিং প্রকল্পের নামজারি করতে আসা গ্রাহকদের পরিমান কত ? । জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে কর্মরত অবস্থায় থাকতে হাউজিং কোম্পানির কোন নামজারির আমাদের নিকট করেনি কেউ।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আমরা স্থানীয়দেরকে বলেছি কারা জমি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করেন তাদের ব্যাপারে জানাতে। এখন বিষয়টি জানলাম। তবে এমন কিছু ঘটে থাকলে বা ভুক্তভোগীরা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।