সরকারের প্রথম পর্বে (ছয় মাস) দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের কথা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রথম পর্বের একটা অভিজ্ঞতা হলো, সরকার দেশের জনগণের ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থন দুটোই পেয়েছে। পৃথিবীজুড়ে আমাদের প্রতি বড় রকমের সমর্থন গড়ে উঠেছে। যে কারণে অপরপক্ষ (ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকার) সুবিধা করতে পারছে না, বহু গল্প করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো গল্প টিকাতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গিয়েও গল্প চালাতে পারল না। ছোট রাষ্ট্র, বড়, মাঝারি এবং ধনী সব রাষ্ট্র আমাদেরকে সমর্থন করছে। কারোর কোনো রকম দ্বিধা নেই।
শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আজ প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত যোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, কোনো রাষ্ট্রের প্রধানের সঙ্গে যখন আমরা কথা বলি, তখন তারা বলে আপনাদের কী লাগবে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। একটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে এর চেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলা, আর কী হতে পারে। তারা এ পর্যন্ত আমাদেরকে মেনে নিয়েছে এবং ক্রমাগতভাবে তাদের সমর্থন বেড়ে চলেছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক- এই দুই সমর্থন পাওয়ার পরও যদি আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারি, সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের হবে। আমরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।
সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক মহল আমাদেরকে বলে যে তোমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করতে পারি কিন্তু সংস্কারটা তোমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন, সহযোগিতা এবং তাদের শুভেচ্ছা আমাদের জন্য মস্ত বড় সম্পদ। আমরা তাদেরকে বহু রকমের স্বপ্নের কথা বলেছি, তারা বলেছে তোমরা করতে পারলে আমাদের সমস্যা নেই। কোনো কোনো শক্তিশালী দেশ আমাদেরকে বিশেষভাবে সহায়তা করতে চায়। তাই বলছি, সংস্কার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থ হবার কোনো সুযোগ নেই। ব্যর্থ হতে চাই না।
তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল, সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা অন্যরূপে বেরিয়ে আসতে পারি। হা-ডু-ডু খেলার ক্ষেত্রে আইন মেনে চললেও দেশটাকে একটা তামাশায় পরিণত করা হয়েছিল। আইন বলে কিছু ছিল না, নিয়ম বলে কিছু ছিল না। জুলাই বিপ্লবে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তারা নির্দেশ দিয়ে গেছে আমরা যেন সেই আইনকানুন বাদ দিয়ে ফেলে নতুন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হই। কী আইন প্রয়োজন হবে সেগুলো মাথায় রেখে সংস্কার কমিশন করা হয় এবং কমিশনে যারা ছিলেন, তারা তাদের কাজটি করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আমরা যদি আমাদের ঐক্যকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে সেটি বংশ পরম্পরায় চলতে থাকবে। মসৃণভাবে সংলাপ চালিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা এক লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এই ছয় মাসের অভিজ্ঞতা হলো, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যক্তি সবাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা দিয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেক তর্কবিতর্ক আছে, তবে আমাদের মধ্যে ঐক্য আছে এবং এটি বজায় থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।