রোববার (৯ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের মধ্যে রেকর্ড। এদিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। সে হিসেবে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে আগামী সাত দিন। এদিকে গত কয়েকদিনের গরমে হাঁসফাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। গরম থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গায় যেমন আজ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ, তেমনি ঢাকায়ও সাম্প্রতিক সময়ে আজ তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। গরমে গত কয়েকদিন ধরেই নাভিশ্বাস অবস্থা মানুষের। একদিকে রোজায় শরীর শুষ্ক, অন্যদিকে ঈদের কেনাকাটা ও রাজপথের জ্যাম মিলে বাতাসের উত্তাপ যেন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কষ্টকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পল্টনের ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করা হকার আজিম মোল্লা জানান, সকাল ১০টা নাগাদ দোকান খুলি। এরপর গরমের কারণে ৩টা-৪টা পর্যন্ত ভীষণ কষ্ট হয়। যারা কাপড় কিনতে আসেন, তারাও গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু সামনে ঈদ। কেনাকাটা তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তাই গরম সহ্য করেই কাপড় বিক্রি করে যাচ্ছি।
এদিকে রিকশাচালক রমজান আলী বলেন, রোজা তো রাখতেই পারি না। এরপর গরমে পানির পিপাসায় জান যায় যায় অবস্থা হয় মাঝে মাঝে। দুপুরের দিকে অনেক সময় রিকশা চালানো বন্ধ করে গাছের ছায়ায় বসে থাকি। তবে রিকশার জমার টাকা না উঠলে তো সেই বসে থাকতেও পারি না। এই সময় খুব কষ্ট হয় রিকশা চালাতে।
সালমা ইসলাম মুগদার বাসিন্দা জানান, ঘরে বৃদ্ধ মা আর ছোট বাচ্চা আছে। এত গরম যে ফ্যানের বাতাসেও কাজ হয় না। ঘেমে নেয়ে যায় ওরা। আবার ঘামের কারণে ইদানিং কাশিও হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, আগামী ৭/৮ দিন বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে এই গরম অব্যাহত থাকতে পারে আগামী সাত দিন। এছাড়া ঋতু পরিবর্তনের এই সময় ছিটেফোঁটা বৃষ্টি বিশেষ করে সিলেটের দিকে কিছুটা হলেও কমবে না তাপমাত্রা। তিনি জানান, আজ চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকায় গতকাল ছিল ৩৭ দশমিক ৪, যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে ছিল ৩৮, আজ তা আরও কিছুটা বেড়ে ৩৮ দশমিক ১; রংপুরে ছিল ৩৪ দশমিক ৩, আজ তা বেড়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯; ময়মমসিংহে ছিল ৩৪ দশমিক ৫, আজ ৩৪ দশমিক ৭; সিলেটে ছিল ৩৫, আজও তা ৩৫ ডিগ্রিই আছে; চট্টগ্রামে ছিল ৩৫, আজ তা বেড়ে ৩৬ দশমিক ২; খুলনায় ছিল ৩৬ দশমিক ৫, আজ তা ৩৭ এবং বরিশালে ছিল ৩৬ দশমিক ৮, আজ তা কিছুটা কমে ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে।
এপ্রিল মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এদিকে ভ্যাপসা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। একইসঙ্গে গরমে ঘেমে অনেকের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দিকাশি বাড়ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি পরামর্শ হিসেবে বলেন, এই সময় রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। যারা রোজা রাখছেন তাদের ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে, যাতে শরীরে কোনও পানির ঘাটতি না হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যাতে কম ঘামে যেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাইরে বের হলে সানগ্লাস, মাস্ক, ক্যাপ, স্ক্যার্ফ ব্যবহার করা উচিত যাতে সুর্যের তাপ সরাসরি শরীরে না লাগে।