তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো: হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, একক আধিপত্য বিস্তার এবং এলাকাপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২০২২ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আগে তিনি দীর্ঘদিন উপাধ্যক্ষ হিসেবে অত্র কলেজে দায়িত্বপালন করেছেন। সেসময় তারই সহোদর বড়ভাই অধ্যাপক মো: আব্দুর রশিদ অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। অভিযোগ আছে, অনেক সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে জনাব হারুন-অর-রশিদকে অধ্যক্ষ পদে বসিয়েছেন তার বড় ভাই সাবেক অধ্যক্ষ এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই দুই সাবেক অধ্যক্ষের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি। বড় ভাই অধ্যাপক আব্দুর রশিদ জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। হারুন-অর-রশিদ নিজে সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে নিজ এলাকায় ও কলেজে রাজনৈতিক প্রভাব বলয় তৈরি করতে যোগ্যতা কিংবা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গণহারে সরিষাবাড়ি কেন্দ্রিক আত্মীয়-স্বজনদের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে কলেজে প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিক্ষক ও ৫০ শতাংশ কর্মচারী সরিষাবাড়ি এলাকার। তাছাড়া অধ্যক্ষের এক সহোদর বড় ভাই কলেজের আইন উপদেষ্টা, তার স্ত্রী বিবিএ বিভাগের শিক্ষক, অধ্যক্ষের স্ত্রী রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক, শ্যালিকা গণিতের শিক্ষক, ভাগ্নে হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক, দুই ভাগ্নি জামাই এর একজন গনিতের শিক্ষক, আরেকজন হিসাববিজ্ঞানের শিক্ষক, ভাতিজা বউ প্রাণরসায়নের শিক্ষকসহ দুঃসম্পর্কের অনেকে আত্মীয়তার সুবাধে কলেজে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন যা ছিল অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্ত। এছাড়াও অন্তত শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে অধ্যক্ষের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সবমিলিয়ে কলেজটাকে দুই ভাই নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়েছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া গত ১৫ বছরে দুই ভাই ঢাকা ও জামালপুরে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কলেজের উন্নয়ন, নিয়োগ, চাকরি পরীক্ষা এবং কলেজ ফান্ড থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগ উঠছে। গত জানুয়ারির নির্বাচনে সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদের নির্বাচনী খরচ চালানোর জন্য কলেজ অধ্যক্ষ হারন-অর-রশিদের মৌখিক নির্দেশে জন প্রতি শিক্ষক ও কর্মচারীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। আর এসব কাজে অনৈতিক কাজে অধ্যক্ষকে সামনে থেকে সহায়তা দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক বলে পরিচিত ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব সাবির আমিন রেজা, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মশিউর রহমান, কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক জনাব এরশাদুল ইসলাম সৈকত, এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মেহেরুল হাসান সোহেল এবং জনাব জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে তেজগাঁও কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান এখন পর্যন্ত নিখোঁজ, অভিযোগ এই দুই ভাইয়ের দিকে বলে অনেকে বলছেন। নিজেদের রাস্তা মসৃণ করতেই তৎকালীন উপাধ্যক্ষকে গুম করা হয় বলে ধারণা কলেজ সংশ্লিষ্টদের।
কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান আওয়ামীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন। কাজেই তার কলেজে অধ্যক্ষ হওয়ার এবং জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) আসনের এমপি পদে মনোনয়ন পাওয়ার বেশি সম্ভাবনা ছিল বলে আমরা শুনেছি।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ হারুন-অর-রশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তিনি আর কলেজে যোগদান করেন নি।