দেশে তৈরি পোশাকখাতে ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছেন বলে সংসদকে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
রোববার সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী জানান, বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী শ্রমিক অর্থাৎ নারী শ্রমিক ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন। বিকেএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী নিট সেক্টরে ১৭ লাখ ২৫৫ শ্রমিক রয়েছে। যার ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭ জন নারী। সব মিলিয়ে দেশে তৈরি পোশাকখাতে মোট ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছেন। যার ৫৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২২ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে মোট লোকবল ৪৩ লাখ ১৬ হাজার। যার ৩৭ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখ ১৯ হাজার জন নারী শ্রমিক।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসান ইসলাম টিটু সংসদকে জানান, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) জুলাই-মে সময়ে তৈরি পোশাক খাত হতে রপ্তানি আয় রয়েছে ৪৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
প্রতিমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ এর প্রভাব, বৈশ্বিক মহামারী, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার আমেরিকা ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি কারণে রপ্তানি আয় অর্জনে শ্লথ গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পণ্যের ডিমান্ড সাইডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বাংলাদেশ সাপ্লাই সাইড হিসেবে রপ্তানি খাতে বিশ্ব বাজারের চাহিদা পূরণে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা বিশ্ববাজারে কমে যাওয়ার কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। তবে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশে এ খাত হতে রপ্তানি আয় অর্জনে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত একযুগের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সব থেকে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতি ছিলে ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২ অর্থ বছরে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল।
চাপাইনবাবগঞ্জের ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে বিশ্বের ২১০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে ৮২টির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে চীনের সঙ্গে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ হাজার ২৩৯ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ছাড়া অন্যদেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তিনি জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ২০১১-১২ অর্থ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ৩৬২ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে এসব দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি ৫ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ১০৩ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে।