Imam Hossain
একটা সময়ে তোতলানোর কারণে, বিভিন্ন জায়গা থেকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিলো এই তরুণকে। সেই থেকে নানা হতাশা, দুর্দশাকে ঘিরে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে পরে সে- ‘দুর্বলতাকে শক্তি বানানোর।’ এই পথে বাধা, হাসি ঠাট্টার মুখ্যম জবাব, যেন আজ তার বর্তমান ব্যক্তিত্ব এবং মিডিয়া কার্যক্রম।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগের ছাত্র নিলয় ধর নীল। বেশিরভাগই পরিচিত নীল নামে। চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ ভূমি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার, একটি ব্যবসায়িক পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণ স্বপ্ন দেখেন একটি স্মার্ট দক্ষতাসম্পন্ন প্রজন্ম গঠনের।
ড্যাফোডিলের বিভিন্ন ক্লাব, অর্গানাইজেশন, প্রজেক্টের অনেকগুলোতে ব্র্যান্ডিং সেক্টরের নেতৃত্বে দেখা যায় তাকে। এছাড়াও ক্যামেরার সামনে ড্যাফোডিলকে তুলে ধরতে যেনো একদমই দ্বিধাগ্রস্ত হন না। সাথে সাংবাদিকতায় পড়াশোনা, যেন তাকে এই মিডিয়া পাড়ায় একটি দারুণ বেগ দিয়েছে৷ ব্যবসায়ীক পরিবার থেকে উঠে এসে, মিডিয়ায় পড়াশোনার এই অদম্য ইচ্ছাকে পূরণ করতে, দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো তাকে। কিন্তু নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকা এবং প্যাশনকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে, বিফলতার মুখ দেখতে হয়নি তাকে। একাগ্রতার সাথে এগিয়েছেন নিজের ইচ্ছায়, বাজিমাত করেছেন বিভিন্ন সেক্টরে৷
২০২২ সালে এশিয়া গ্লোবাল পিস সামিটে, বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেন নীল। ইউনাইটেড নেশনসের ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রার বৈঠকে গ্লোবাল পিস ইনিসিয়েটর হিসেবে খেতাব পান তিনি। এছাড়াও ” বি এ মিডিয়া স্টার ” ট্যালেন্ট হান্টের বিজয়ী হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পুরষ্কার প্রাপ্তি সহ, নৌস্কাউট এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন৷
নিজেকে সরাসরি সেলসম্যান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করেন নীল৷ বাংলাদেশে, সেলস প্রফেশনকে দারুণভাবে মহিমান্বিত করা একজন তরুণ তিনি ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদককে জানান- ” আমার সেলসম্যান হিসেবে পরিচয় দিতে একদমই লজ্জা করেনা। কারণ আমি একটি ব্যবসায়ীক পরিবার থেকে উঠে এসেছি। আমি চাইলেই নিজেকে পারিবারিক ব্যবসার পরবর্তী কর্ণধার বলতেই পারি, কিন্তু সেটা আমি চাইনি৷ ছোট বেলা থেকে বাবা-দাদুর সাথে দোকানে বসতে বসতে বেচা কেনার আর্ট, আমি দারুণভাবে রপ্ত করি। একসময় উপলব্ধি করলাম, এটি শুধু আমাকে কোনো পণ্য বেচা কেনাই শেখায়নি৷ আমাকে শিখিয়েছে সম্পর্ক তৈরী করা, নেতৃত্বের দক্ষতা, মার্কেটিং, নেগোসিয়েশন, এক্টিভ লিসেনিং, প্রেজেন্টেশন স্কিল, লেনদেন সহ আরো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গুণ। ”
তিনি আরো বলেন- ” আমরা সবাই সেলসম্যান। যখনি আমরা কারো কাছে আমাদের কিছু একটা রিপ্রেজেন্ট করতে যাই, সেটি কিন্তু ঘুরেফিরে নিজের কিছু একটা বিক্রি৷ আর যখনি নিজের সম্পর্কে বলতে যাই, সেটা নিজেকে বিক্রি ৷ এই সেলস, আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেলস না থাকলে, যেমন ব্যবসায় পণ্য নিয়ে বসে মাছি মারার অবস্থা হবে। তেমনি সেলসের আর্ট জানলে, ব্যবসায়ীক গ্রোথ হবে দ্বিগুণ-তিনগুণ- চারগুণ। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত জীবনেও সেলস রপ্ত করতে না পারলে বা নিজেকে বিক্রি না জানলে, বর্তমান তরুণ স্রোতের মাঝে মুহুর্তেই পিছিয়ে যাবে এবং যে বেকার সে আরো বেকার থেকে যাবে। তাই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংও জানা, বর্তমান শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত প্রয়োজন৷ ”
” আপনি কোন ব্র্যান্ড গড়ার আগে, নিজেকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলুন ” – এই ভাষ্যকে সামনে রেখে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং এরও একজন দারুণ উদ্যোক্তা নীল। ভালোবাসেন শিক্ষার্থীদের পারসোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করতে৷ এছাড়াও শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্নভাবে প্রভাব রাখছেন এই তরুণ। ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাইলে নীল জানান- ” জেনারেশন জেড এর অংশ হিসেবে, আমি মনে করি আমরা ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় দেখে আসছি। তাই বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে, দেশে যেমন কর্মক্ষেত্রের অভাব নেই, তেমনি কম্পিটিটরেও অভাব নেই । তাই উচিত নিজের মধ্যকার স্কিলগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বিষয় নির্ধারণ করা এবং সেই হিসেবে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং করা৷ এই বৈপ্লবিক যাত্রায়, আমি শিক্ষার্থীদের সাথে স্মার্ট স্কিলফুল জেনারেশন গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে চাই এবং বাংলাদেশের পণ্যের ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডিং এ মূখ্যম ভূমিকা পালন করতে চাই৷ “