অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজধানীর একাধিক সড়কে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ কারণে যানজটের এই শহরে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রোববার (১৮ আগস্ট) ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব, কাকরাইল, সায়েন্স ল্যাব, নিউ মার্কেট, রমনা, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, উত্তরাসহ আরও কয়েকটি জায়গায় এসব দাবিতে অবস্থান, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এছাড়া যানজটের মূল কারণ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রায় ১৬-১৭টি সংগঠন সড়কের মধ্যেই মানববন্ধন করছে।
তাদের মধ্যে কেউ দাবি নিয়ে এসেছেন বেতন বৈষম্য দূর করা, কারও চাকরি জাতীয়করণ, কেউ নেমেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, আবার কারও দাবি পরীক্ষা বাতিল। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের দাবি নিয়েও এসেছেন কেউ কেউ। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে কোথাও পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সাপ্তাহিক ছুটি শেষে আজ (রোববার) ঢাকার অফিস-আদালতের কার্যক্রম চালুর সঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও গণপরিবহন বেড়েছে, সেই সঙ্গে যানজটও বেড়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেতন বৈষম্য থেকে মুক্তি এবং চাকরি জাতীয়করণ করে পুলিশ সদস্যদের মতো রেশন ও পেনশন সুবিধার দাবিতে থেকেই সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ১৪ অগাস্ট থেকে গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটির ব্যানারে এই আন্দোলন শুরু হয়।
‘বেতন বৈষম্যবিরোধী গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটি’র ব্যানারে কর্মসূচিতে নামা অবরোধকারীরা কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকালে অবস্থান নেন কাকরাইলের প্রধান বিচারপতির বাসবভনের সামনের মোড়ে। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকলেও অবরোধকারীদের দেখে তারা সরে যান। সব মিলে কাকরাইল ঘিরে পল্টন, শান্তিনগর ও রমান পার্কের চারপাশের রাস্তাগুলোয় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। একই সড়কে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য অবস্থান করছেন বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ।
পাশাপশি মাদ্রাসা বোর্ডে বৈষম্য রোধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। এছাড়া তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ করছে। আর প্রেস ক্লাব থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ‘সাধারণ’ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া প্রেস ক্লাবের সামনে জায়গা না পেয়ে তৎকালীন বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের একটি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে চেয়েছেন তারা।
এদিকে, সায়েন্সল্যাব মোড়ে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বেলা ৩টার দিকে একদল শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে। এছাড়া হলে থাকার সিটের নিশ্চিয়তার দাবিতে নিউ মার্কেটের সামনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। সায়েন্সল্যাব ও নিউ মার্কেটের এই দুই কর্মসূচির কারণে শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত প্রায় সড়কে কয়েক ঘণ্টা গাড়ির চাকা থমকে যায়।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় রমনার যমুনা অতিথি ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবলসহ প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি তোলেন তারা। এছাড়া সকালে বাংলামোটরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সামনে ও কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে দাবি আদায়ে ব্যানার নিয়ে লোকজনকে দাঁড়াতে দেখা গেছে। রমনা, বাংলামোটর ও কাকরাইলের রাস্তায় ওই সব কর্মসূচির কারণে ফার্মগেট, মগবাজার ও পান্থপথসহ আশাপাশের সব সড়কে যানজটে ভোগান্তি পড়েন রাজধানী।
এছাড়া রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনের ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে একরামুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে তারা রাস্তায় নামলে রামপুরার উত্তরে বাড্ডা ও দক্ষিণে মালিবাগ-মৌচাক পর্যন্ত সড়কে গাড়ির চাকা থমকে যায়।
অন্যদিকে, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে সড়ক অবরোধ করেন সেখানকার পরীক্ষার্থীরা। ওই এলাকার বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নেয়। ফলে উত্তরার সড়কেও ভোগান্তিতে পড়েন আরোহীরা।
বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. সোহেল রানা বলেন, আজ (রোববার) থেকে সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ায় সড়কে এমনিতেই চাপ ছিল বেশি। সব মিলিয়ে সড়কে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও কোথাও সড়কে ধীরগতি হয়েছে। তবে যানজট স্বাভাবিক করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যেসব সড়ক বন্ধ, ডাইভারশন দিয়ে অন্য সড়কে পাঠিয়ে যান চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।